সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ ভাবসম্প্রসারণ, ৬ষ্ঠ-দ্বাদশ শ্রেণি

সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ ভাবসম্প্রসারণ

সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ ভাবসম্প্রসারণ: আজকে তোমাদের আসন্ন পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ভাবসম্প্রসারণ সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ নিয়ে আলোচনা হবে। ভালো বিষয় হচ্ছে আমরা এক বা দুইটি নয়, মোট ৪টি স্যাম্পল লিখেছি। যাতে সহজ/কঠিন তা তোমাদের পরীক্ষার জন্য বাছাই করতে সুবিধা হবে। তাহলে দেরি না করে এখনি আতত্ত করে নাও।

পোস্টের বিষয়বস্তুভাবসম্প্রসারণ লিখন
ভাবসম্প্রসারণ টপিকসৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ
প্রযোজ্য শ্রেণিক্লাস ৬, ৭, ৮, এসএসসি, এইচএসসি
সর্বমোট নমুনা আছে৪টি (১টি ছবিসহ)

সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ ভাবসম্প্রসারণ – ৬ষ্ঠ শ্রেণি

ভাব-সম্প্রসারণ: প্রত্যেক মানুষই তার জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন সত্তা বহন করে। সে একাই তার বিবেককে নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এক্ষেত্রে তার সঙ্গের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ভবিষ্যতের সুন্দর বা খারাপের বিষয়টি নির্ভর করে ব্যক্তির ইচ্ছা বা সঙ্গ নির্বাচনের ওপর। যেসব মানুষ উন্নত চরিত্র বা সৎ-স্বভাবের লোকের সঙ্গে মেলামেশা করে, তাদের স্বভাব-চরিত্রও সুন্দর ও বিকশিত হয়ে ওঠে। অন্যদিকে যারা কুসঙ্গে বা কুসংসর্গে থেকে নিজেদের চরিত্রের অধঃপতন ঘটিয়েছে, সমাজে তাদের বিপর্যয় অনিবার্য।

তাই মানবজীবনে সঙ্গ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রকৃতিতেও যেসব বস্তু সুন্দর ও রমণীয়, সেগুলোর সংস্পর্শে যেসব বস্তু থাকে তারাও সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। খারাপ বস্তুটি সুন্দর বস্তুটির গুণ নিজের মধ্যে ধারণ করে অন্যের কাছে নিজেকে মর্যাদাবান ও গ্রহণযোগ্য করে তোলে। প্রকৃতপক্ষে, সঙ্গই সৃষ্টিকে মহিমান্বিত করে তোলে। আর এজন্য সঙ্গই হলো সবকিছুর সাফল্য ও বিফলতার চাবিকাঠি।

সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ ভাবসম্প্রসারণ – ৭ম, ৮ম শ্রেণি

মূল বক্তব্য: সৎসঙ্গ মানুষকে চরিত্রবান করে। কুসংস্পর্শ মানুষকে পাপ-পথে পরিচালিত করে । জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করতে হলে সৎ লোকের সংস্পর্শে থাকতে হবে। অসৎ লোকের সাথে মিশলে জীবনে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। মানুষ একা বাস করতে পারে না। তার সঙ্গী ও বন্ধু দরকার। কিন্তু বন্ধু নির্বাচনে তাকে খুব সতর্ক হওয়া উচিত। একজন ভালো ব্যক্তি ভালো বন্ধু বা সঙ্গী রাখে এবং একজন খারাপ লোক খারাপ বন্ধু বা সঙ্গী রাখে। খারাপ বন্ধুর সাথে চললে চরিত্র কলুষিত হয় এবং ধার্মিক বন্ধুর মাধ্যমে তা আলোকিত হয়।

সম্প্রসারিত ভাব: মানবজীবনকে সার্থক ও সুন্দর করতে হলে অনেক বাধাবিপত্তির মোকাবিলা করতে হয়। সৎ লোকের সাহচর্যে থেকে তার আদর্শ অনুসরণ ও অনুকরণ করলে এসব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করা সম্ভব। সৎসঙ্গ পরশপাথরের সঙ্গে তুলনীয়। সঙ্গদোষে মানুষ হয় পশুর সমান। আবার এ সঙ্গের কারণেই কেউ আকাশচুম্বী সম্মান পায় । সঙ্গী বা বন্ধু হলো আয়নার মতো, যাতে আমাদের রুচি, চরিত্র ও বুদ্ধির প্রতিফলন ঘটে। বন্ধুত্ব মানুষের চরিত্র গঠনে সহায়ক।

একজন সৎ ব্যক্তি কখনো অসৎ ব্যক্তির সাথে মিশতে চায় না। এ জগতে যত গহ্বরে নিমজ্জিত হয়েছে তারা কুসংসর্গের প্ররোচনায় হয়েছে। একজন মানুষ যদি খারাপ লোকের সঙ্গে দীর্ঘদিন মেলামেশা করে, তাহলে সে কিছু খারাপ অভ্যাস গ্রহণ করবে। আবার যে সৎ বন্ধুর সঙ্গে মেশে সে কিছু ভালো বৈশিষ্ট্য অর্জন করবে। জীবন সার্থক ও সুন্দর হয় সৎ লোকের সংস্পর্শে। আবার সৎ লোকের সংস্পর্শে অসৎ চরিত্রের লোক চরিত্রবান হয়ে যায়। পবিত্র কোরানে বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। তাই বলা যায়- “A man is known by the company he keeps.”

উপসংহার: মানুষ পঙ্কিলতার অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হয়েছে তারা অসৎ ব্যক্তির সাথে আমাদের উচিত সৎ, যোগ্য ও সুন্দর চরিত্রের অধিকারী কাউকে বন্ধু হিসেবে নির্বাচন করা এবং তার সাহচর্য লাভ করে জীবন সার্থক করা।

আরো পড়ুন: ভোগে নয় ত্যাগেই প্রকৃত সুখ ভাব সম্প্রসারণ

সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ ভাবসম্প্রসারণ – মাধ্যমিক

ভাবসম্প্রসারণ: সামাজিকভাবে সমাজে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে নানা ধরণের মানুষ- জ্ঞানী-মূর্খ, ভাল- মন্দ, সৎ-অসৎ এর সমাবেশ লক্ষ্য করা যায় । বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্য থেকে সঙ্গ নির্বাচনের জন্য গুণবান বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষকে গুরুত্ব দিতে হবে। যার সহায়তায় জীবন ঔজ্জ্বল্যময় হতে পারে। সেখানে দুর্জন বা চরিত্রহীন ব্যক্তির অনুপ্রবেশের কোন সুযোগ থাকবে না। তাই আলোকজ্জ্বল জীবনের আশায় সব সময় নিজেকে কুসঙ্গ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা উচিৎ।

মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ তার চরিত্র। চরিত্রের গ্রহণেই মানুষ শ্রেষ্ঠ আদর্শের মর্যাদা পায়। এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে অপরাপর বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটানো যায়। তাই অসৎ লোক নয়, সৎলোকের সঙ্গলাভের মধ্য দিয়ে নিজেকে সঠিক পথে বিকশিত করতে হবে। অসৎ লোকের সঙ্গ মানুষকে অমানুষ করে দেয়, তার সদগুণসমূহ নষ্ট হয়ে গিয়ে সে পশুর মত অধম হয়ে যায়। গুণগতভাবেই মানুষ সত্যের পূজারি, সুন্দরের অনুসারী। তাই অসৎপথে যাওয়ার কারণ মূলত অসৎসঙ্গ এবং এই অসৎসঙ্গের কারণেই মানুষের চরিত্র কলুষিত হয় । যেমন- লোহা ওজনে ভারী হওয়ায় পানিতে ডুবে যায়, কিন্তু অসার কোন পদার্থের সঙ্গে বেঁধে দিয়ে ছেড়ে দিলে লোহা আর ডুবে যাবে না। মানুষের মধ্যেও অসৎসঙ্গের প্রভাব এভাবে কার্যকরী হয়।

আসলে সঙ্গদোষে মানুষ পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং কুসঙ্গই চরিত্রহীনতার অন্যতম কারণ। অথচ চরিত্রের মধ্যেই নিহিত রয়েছে জীবনের গৌরব। চরিত্রের দ্বারাই জীবনের গৌরবময় বৈশিষ্ট্য ঐশ্বর্যমন্ডিত হয় এবং মানুষ জনসমাজে শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র হিসেবে আদৃত হয় এই চরিত্রের কারণে। স্পর্শমণির ছোঁয়ায় লোহা যেমন সোনা হয়ে ওঠে তেমনি সৎচরিত্রের প্রভাবে মানুষের পশুপ্রবৃত্তি ঘুচে যায়, জন্ম নেয় সৎ, সুন্দর ও মহৎ জীবনের আকাঙ্ক্ষা । আবার সঙ্গদোষে মানুষ তার চরিত্রকে হারিয়ে পশুর চেয়েও অধম হয়ে যায় । ইতিহাসের তথ্যমতে যত ব্যক্তির অধঃপতন হয়েছে তার মূলে সক্রিয় রয়েছে অসৎ সংসর্গ। মানুষ সতর্ক থাকলেও কুসংসর্গে পড়ে নিজের অজ্ঞাতে পাপের পথে পরিচালিত হয়। তাই সঙ্গ নির্বাচনে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ ভাবসম্প্রসারণ – উচ্চ মাধ্যমিক

ভাবসম্প্রসারণ: ‘সঙ্গ’ বলতে সাহচর্য বা বন্ধুত্বকে বোঝায়। ‘সঙ্গ’ শব্দটির সঙ্গে গুণ বা দোষ, সৎ বা অসৎ, ভালো বা মন্দের নিবিড় সম্পর্ক আছে। কেননা এতে কারও কল্যাণ হয়, আবার কারও অকল্যাণ বা ক্ষতি হয় । তবে ‘সঙ্গ’ শব্দটি ইতিবাচক ধারণার পরিবর্তে অনেক সময়ই নেতিবাচক ধারণাকেই নির্দেশ করে। যখন বলি ‘আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ’ তখন তা ইতিবাচক ধারণা দেয়। কিন্তু যখন বলি ‘অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’ বা ‘সঙ্গদোষে লোহা ভাসে’ তখন চরম নেতিবাচক দিকটিই মুখর হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে সঙ্গদোষের সাথে অসৎ সঙ্গটাই সমার্থক হয়ে ওঠে। লোহার সাধারণ ধর্ম হলো, তা ওজনে ভারী এবং তরলে ডুবে যায়। কিন্তু লোহার সাথে অন্য কিছু সংযোজন করা হলে তা তাকে ভাসতে সহায়তা করে। অর্থাৎ লোহা তার সাধারণ ধর্ম হারিয়ে ফেলে। একইভাবে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ আছে বলে সেই নীতি ও আদর্শেই মানুষ নিজেকে গড়ে তোলে। তার মধ্যে সৎ গুণাবলির সমাবেশ ঘটে এবং ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। আর এই ইতিবাচক গুণাবলি বা মনোভাবই তার ব্যক্তিত্ব নির্মাণ করে, যা থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন বা পৃথক করা যায় না।

নীতি বা আদর্শে অটল এমন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষই সৎ, কল্যাণ চিন্তা, শুভবোধসম্পন্ন ও কৃতি হিসেবে নন্দিত ও প্রশংসিত হয়। কিন্তু ‘সঙ্গ’ যদি অসৎ, ক্ষতিকর, অকল্যাণকর, দুরভিসন্ধিমূলক হয় তাহলে তা হয় নিন্দিত ও সমালোচিত। অর্থাৎ সেই ‘সঙ্গ’ কুসঙ্গ বা কুসম্পর্ককে নির্দেশ করে। এই কুসঙ্গ মানুষকে খারাপ পথে নিয়ে যায়। খারাপ পথ তাকে অপরাধী করে তোলে, এমনকি তার মৃত্যুকেও ত্বরান্বিত করে। সঙ্গদোষে সে স্বাভাবিক সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, খারাপ অভ্যাস তার স্বভাবে পরিণত হয়ে তাকে মনুষ্যত্ববিরোধী করে তোলে। অর্থাৎ তার মানবিক গুণগুলো লুপ্ত হয়ে তাকে অমানুষ করে তোলে । সঙ্গদোষ তাকে বিভ্রান্ত করে নেতিবাচক পথে চালিত করে। ফলে সে হয়ে ওঠে দোষী, অপরাধী, পাপী এমনকি খুনি। এ কারণেই বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হয়, তার স্বভাব-চিন্তা-কাজকর্ম বিচার করে বাছাই করে নিতে হয়। সৎ, যোগ্য, সুন্দর ও উন্নত সঙ্গ নির্বাচন করলে জীবন হয়ে ওঠে প্রশংসিত, ধন্য ও সার্থক । মানুষ স্বাভাবিকভাবেই সঙ্গদোষ অর্থাৎ অসৎসঙ্গ কামনা করে না, বরং সৎসঙ্গই কামনা করে।

সম্পূর্ণ ভাবসম্প্রসারণটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, আমাদের লেখা অন্যান্য ভাবসম্প্রসারণগুলো পড়তে ক্যাটাগরি সিলেক্ট করে দেখে নিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top