দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য ভাবসম্প্রসারণ ফর ক্লাস ৬, ৭, ৮, এসএসসি ও এইচএসসি: সুপ্রিয় রিডার ভাই-বোনেরা আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য ভাবসম্প্রসারণ। আমরা আগের মত এখানেও কয়েকটি নমুনা সুন্দর করে পরীক্ষার উপযোগী করে লিখেছি। তোমরা যদি এই ভাবসম্প্রসারণ খোঁজে থাক তাহলে এখান থেকে শিখে ফেলতে পারো, আশা করি ভাল লাগবে।
| পোস্টের বিষয়বস্তু | ভাবসম্প্রসারণ লিখন |
| ভাবসম্প্রসারণ টপিক | দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য |
| প্রযোজ্য শ্রেণিসমূহ | ক্লাস ৬,৭,৮, এসএসসি, এইচএসসি |
| নমুনা আছে | ৪টি (ছবিসহ) |
দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য ভাবসম্প্রসারণ (নমুনা-১)
ভাব-সম্প্রসারণ: দুর্জন মানে খারাপ লোক। খারাপ লোক যতই শিক্ষিত হোক না কেন, তার সঙ্গ ত্যাগ করা উচিত। সাধারণত মিথ্যাবাদী, দুর্নীতিপরায়ণ ও চরিত্রহীন লোককে এককথায় দুর্জন বলা হয়। যারা খারাপ লোক, তাদের কথায় ও আচরণে খারাপ স্বভাব প্রকাশ পায়। খারাপ লোক শিক্ষিত হতে পারে, উচ্চশিক্ষিত হতে পারে; আবার নিরক্ষরও হতে পারে। অর্থাৎ কারো খারাপ হওয়ার সঙ্গে শিক্ষিত হওয়া বা না-হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
যারা খারাপ লোকের সঙ্গে মেশে, তাদের সবাই খারাপ লোক মনে করে। এজন্য খারাপ লোকের সঙ্গ ত্যাগ করতে হয় এবং তেমন লোকের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়। একসময়ে এই বিশ্বাস করা হতো কোনো কোনো বিষধর সাপের মাথায় মণি আছে। কিন্তু মণি আছে বলে সাপের সঙ্গে থাকাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তেমনি দুর্জন লোক শিক্ষিত হলেও তার সঙ্গ পরিত্যাগ করা উচিত। দুর্জন লোক অপরের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা কখনো পায় না। তার কাছ থেকে সঙ্গীর কিছু শেখার নেই। এমনকি, দুর্জনের কারণে সঙ্গীর বিপদও হতে পারে। বিপরীতভাবে, ভালো লোক নিরক্ষর হলেও তার সঙ্গ প্রীতিকর হয়। ভালো লোকের কাছ থেকে তার সঙ্গীর বিপদ ঘটার সম্ভাবনা থাকে না।
সচ্চরিত্র গঠন করা বিদ্যা অর্জন করার চেয়েও কঠিন কাজ । তাই যিনি চরিত্রবান, তার বিদ্যা থাক বা না-থাক, তার সঙ্গ প্রত্যাশিত। অন্যদিকে চরিত্রহীন ব্যক্তি বিদ্বান হলেও তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখাটা ক্ষতিকর।
দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য ভাবসম্প্রসারণ (নমুনা-২)
ভাব-সম্প্রসারণ: বিদ্বান হওয়া মানেই সুজন হওয়া নয় । চরিত্রহীন ব্যক্তিও বিদ্বান হতে পারে; কিন্তু সে সুজন নয়- দুর্জন। তার বিদ্যা মা বিদ্যা মানবকল্যাণে ব্যয় হয় না। তাই তার সঙ্গ গ্রহণ কখনো উচিত নয়, কারণ সে বিদ্বানের মোড়কে নিজেকে জড়িয়ে রেখে নিষ্কলুষ লোককে কলুষিত করতে পারে। যে কারণে তাকে পরিত্যাগ করাই শ্রেয় । বিদ্বান ব্যক্তি সর্বত্র সম্মান পান। বিদ্যার মতো এত অমূল্য সম্পদ মানুষের আর কিছুই নেই ।
বিদ্যা শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো চরিত্র গঠন। লেখাপড়া শিখে যদি চরিত্রই গঠন করা না যায়, তবে সে বিদ্যার কোনো সার্থকতা নেই। চরিত্রগুণে গুণান্বিত ব্যক্তিরাই সমাজে সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু বিদ্বান ব্যক্তি যদি সুজন না হয় তাহলে তাঁর সান্নিধ্য কেউ কামনা করে না। বিদ্যাশিক্ষা করে যে ব্যক্তি বিদ্যার মর্যাদা দেয় না, মানুষের অপকার করে, স্বীয় স্বার্থ আদায়ে অমানুষ হয়ে যায় সে ব্যক্তিই দুর্জন। দুর্জনের দ্বারা বিদ্যার অপমান হয়। এরা বিষধর সর্পতুল্য। এদের দ্বারা সমাজ ও জাতির উপকারের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। এরা নিজেদের কাকতুল্য চেহারা ঢাকার জন্য সময়ে ময়ূরপুচ্ছ ধারণ করতেও কার্পণ্য করে না।
এরা ভদ্রবেশী শয়তান। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এরা সমাজের মানুষকে প্রতারণা করে। সাপ বিষাক্ত প্রাণী। মানুষ তাকে ভয় করে। তার মাথায় মূল্যবান মণি থাকলেও মানুষ তার কাছে যেতে সাহসী হয় না। কাছে গেলে জীবন নাশ সুনিশ্চিত। দুর্জন ব্যক্তি সাপের সাথে তুলনীয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মণি আহরণ যেমন বুদ্ধিমানের কাজ নয়, তেমনি চরিত্রহীন বিদ্বান ব্যক্তির সাহচর্যে গিয়ে বিদ্যাশিক্ষা করতেও ঝুঁকি আছে। এতে করে নিজের চরিত্র ধ্বংস হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে । সাপের মাথায় মূল্যবান মণি থাকলেও যেরূপ মানুষ এড়িয়ে চলে, তেমনি চরিত্রহীন বিদ্বান ব্যক্তির সাহচর্যও সমভাবে পরিত্যাজ্য। দুর্জনের নিকট বিদ্যাশিক্ষা কাম্য নয় ।
সমাজ-সভ্যতার উন্নয়নে অসৎ শিক্ষিত লোক মূর্খের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর। তাই শিক্ষিত দুর্জনদের চিহ্নিত করে তাদের সঙ্গ পরিত্যাগ করা উচিত।
দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য ভাবসম্প্রসারণ (নমুনা-৩)
মূলভাব: দুর্জন শব্দের আভিধানিক অর্থ দুষ্ট, দুর্বৃত্ত, খারাপ ইত্যাদি। আর বিদ্বান হল পন্ডিত, সুশিক্ষিত, জ্ঞানী ইত্যাদি । দুর্জন বিদ্বান হলেও নিন্দনীয়, উপেক্ষিত এবং এরূপ ব্যক্তির সঙ্গ বর্জনীয়। কেননা তার কাছ থেকে উপকার পাওয়ার চেয়ে বরং ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ভাবসম্প্রসারণ: মানুষ যে সমাজের ওপর নির্ভর করে সে সমাজে আছে নানা ধরণের লোক- জ্ঞানী-মুর্খ, ভাল-মন্দ, সৎ-অসৎ ইত্যাদি ৷ সঙ্গ নির্বাচনে একমাত্র বৈশিষ্ট্য যার সহায়তায় জীবন উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে এমন গুণবান ব্যক্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে। সেখানে দুর্জন বা চরিত্রহীন ব্যক্তির স্থান থাকবে না। মানুষ চরিত্রের গুণেই শ্রেষ্ঠ আদর্শের মর্যাদা পায়। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে অপরাপর বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটানো সম্ভব। মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ বিদ্যার হিরন্ময় দীপ্তিচ্ছটায় মানুষ হয়ে ওঠে মহীয়ান। বিদ্বান সর্বত্রই মর্যাদাবান এবং সম্মানের হলেও বিদ্বান যদি চরিত্রবান না হয় তাহলে সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। কারণ মন্দ স্বভাব বিদ্বান ব্যক্তির সব গুণকে ম্লান করে দেয়। মনুষ্যত্ব বিরোধী কু-প্রবৃত্তিগুলি দুর্জন লোকের নিত্যসঙ্গী বলে এ শ্রেণীর লোকের নৈতিক চরিত্র দুর্বল। ব্যবহারে এরা রূঢ়, চিন্তায় তরল থাকে। দেশ, সমাজ, জাতি কেউ এদের দ্বারা উপকৃত হয় না বরং এরা সমাজের কলঙ্ক হিসেবে পরিচিত হয়।
অপরদিকে চরিত্র বিদ্যা অপেক্ষা অধিক মূল্যবান বলে সচ্চরিত্রবান ব্যক্তি মূর্খ হলেও তার সংস্পর্শ উপকারী। জ্ঞানার্জনের জন্য চরিত্রহীন জ্ঞানীব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়া কোন ক্রমেই ঠিক না। দুর্জন ব্যক্তি বিদ্যা বুদ্ধিতে মহাপন্ডিত হয়ে খ্যাতিমান হলেও সবার উচিৎ তার সঙ্গ ত্যাগ করা। কারণ চরিত্রহীনের বিদ্যা বুদ্ধি চরিত্রবানের কোন কাজে আসে না। কোন কোন বিষধর সাপের মাথায় অতি মূল্যবান মণি আছে বলে প্রবাদ জানা যায়। সেই সাপের মণি সংগ্রহ করতে পারলে বিপুল সম্পদের অধিকারীও হওয়া যায়। কিন্তু সেই মণি লাভের আশায় কেউ বিষধর সাপের সান্নিধ্যে যায় না প্রাণ হারানোর ভয়ে। অনুরূপ বিদ্যা মহামূল্যবান বস্তু হলেও তা লাভের জন্য চরিত্রহীন বিদ্বানের কাছে যাওয়া নিরাপদ নয়। দুর্জনের বিদ্যা আর বিষধর সাপের মণি উভয়েই বিপদের কারণ হতে পারে । তাই সুন্দর জীবনের জন্য দুর্জনকে পরিহার করতে হবে ।
সিদ্বান্ত: চরিত্র মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ । চরিত্র নষ্ট হলে মানুষ আর মানুষ থাকে না, পশুতে পরিণত হয়। তাই চরিত্রহীন বিদ্বানের সাহচর্য অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
অন্যান্য লেখা পড়ুন: গ্রন্থগত বিদ্যা ভাব সম্প্রসারণ
দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য ভাবসম্প্রসারণ (নমুনা-৪)
মূলভাব: বিদ্বান সব সমাজেই আদৃত ও সম্মানিত । কিন্তু দুর্জন বিদ্বান হলেও সকল সমাজেই ঘূণিত । কেননা দুর্জন বিদ্বানের মোড়কে নিজেকে জড়িয়ে রেখে নিষ্কলুষ লোককে কলুষিত করতে পারে ।
সম্প্রসারিত ভাব: দুর্জন শব্দের আভিধানিক অর্থ দুষ্ট বা খল ব্যক্তি আর বিদ্বান হলো পণ্ডিত, সুশিক্ষিত, জ্ঞানী ইত্যাদি । কিন্তু একজন খারাপ লোকের শিক্ষার জোর থাকলেও তার জ্ঞান বা সেই শিক্ষার শক্তি মূল্যহীন হয়ে পড়ে তার চারিত্রিক ত্রুটির কারণে । চরিত্র হলো প্রতিটি মানুষের অলংকার । কল্যাণ ও সত্যের প্রতি তীব্র অনুরাগই চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। চরিত্রবান ব্যক্তি তার সমস্ত জ্ঞানকে সত্য ও কল্যাণের পথে চালিত করে। মানবকল্যাণে নিমগ্ন চরিত্রবান ব্যক্তি অহংকারহীন ও হিংসাদ্বেষহীন সংযত জীবনেই সুখ খুঁজে পান । বিদ্যা শিক্ষার উদ্দেশ্যই হচ্ছে চরিত্র গঠন । কিন্তু, দুর্জনের চিন্তা ও চেতনা বিদ্যার এ ধারা থেকে বিচ্যুত, ফলে সে হয় দুর্জন । তাই কোনো দুর্জন ব্যক্তি বিদ্বান হলে সে তার সমস্ত জ্ঞান অমঙ্গলের পথে, অসুন্দরের পথে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে, যা সমাজের জন্য কখনোই কল্যাণকর নয়। দুর্জন সমাজের দুষ্টক্ষত। তার সাহচর্যে সুস্থ চিন্তার অধিকারী ও সুন্দর মনের মানুষের চারিত্রিক স্খলন হতে পারে । তাই দুর্জন ব্যক্তির বিদ্যার কাছে নত না হয়ে তার সঙ্গ পরিত্যাগ করাই শ্রেয়।
ড. মুহম্মদ এনামুল হকের মতে– ‘বাক্যে, কার্যে এবং চিন্তায় সামঞ্জস্য রক্ষিত হইলে মানুষের মধ্যে যে পবিত্র ভাব ফুটিয়া উঠে তাহাকে চরিত্র বলিয়া অভিহিত করা যায়। তাই বিদ্বানের পাশাপাশি চরিত্রের এই সত্য পাঠ সবাইকে মনে রাখতে হবে । দুর্জনের চরিত্রে এতসব গুণের সমাবেশ দেখা যায় না। তাই তাকে সমাজের সুজনও ভাবা যায় না । বিদ্যা অমূল্য সম্পদ । বিদ্যা মানুষের চোখ, মন খুলে দেয় এবং চিন্তাকে করে পরিশুদ্ধ । যার মাধ্যমে একজন মানুষ তার চরিত্র গঠনের শিক্ষা নেওয়ারপাশাপাশি বিদ্যা শিক্ষার গুণে সমাজের চারপাশকেও আলোকিত করার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু দুর্জন বিদ্বান তার বিদ্যার সফল প্রয়োগ করে না । তার বিদ্যাকে অন্যায় কাজে লাগিয়ে সমাজজীবনকে হুমকির দিকে ঠেলে দেয়। প্রবাদে আছে যে, কোনো কোনো বিষধর সাপের মাথায় মণি থাকে । মণি বহু মূল্যবান পদার্থ বটে। কিন্তু তাই বলে যেমন মণি লাভের জন্য সাপের সাহচর্য কামনা বুদ্ধিমানের কাজ নয়, ঠিক তেমনই দুর্জন বিদ্বান হলেও বিদ্যালাভের জন্য দুর্জনের সাহচর্যও বুদ্ধিমানের কাজ নয় । অসৎ সঙ্গে নিজের সর্বনাশ না করে দুর্জন ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলাই উচিত।
উপসংহার: সমাজে বিদ্বান ও দুর্জন কোনো লোকেরই অভাব নেই । চরিত্রবান বিদ্বানের সাহচর্যেই ব্যক্তিজীবনকে উন্নত করা উচিত। তবেই বিদ্যার প্রকৃত মূল্যায়ন করা হবে।
এই ছিলো আজকের মত আমাদের সকল লেখা, আমরা চেষ্টা করেছি সবচেয়ে বেশি উদাহরণ দিতে, তারপরো ৪টি দিতে পেরেছি যা যথেষ্ট। বানানে কোন ভুল থাকলে আমাদের জানাবে, যাতে আমরা পরবর্তী ভাবসম্প্রসারণ লেখার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে পারি।




