প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী ভাই বোনেরা, আমাদের আজকের টপিক বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বন্ধুর নিকট পত্র লেখা। ৪টি সুবিন্যস্ত নমুনা উপস্থাপনের মাধ্যমে তোমাদের শিখাবো কিভাবে বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালনের প্রয়োজনীয়তা বর্ননা করে বন্ধু বা বান্ধবীর কাছে চিঠি/পত্র লিখবে। সকল ক্লাসের শিক্ষার্থীরা এখান থেকে শিখতে পারবেন।
| পোস্টের বিষয়বস্তু | পত্রলিখন |
| আজকের পত্রের টপিক | বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালনের প্রয়োজনীয়তা |
| প্রযোজ্য শ্রেণিসমূহ | ক্লাস ৬,৭,৮, এসএসসি, এইচএসসি |
| নমুনা আছে | ৪টি |
বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বন্ধুর নিকট পত্র-১
বাহাদুরপুর, যশোর
১৭. ১০. ২৬ ইং
সুপ্রিয় শোভন,
একরাশ প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইলো। গত মাসে তোমার একটি চিঠি পেয়েছিলাম। কিন্তু উত্তর দেয়া হয়নি। বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালনের আয়োজনে ব্যস্ত ছিলাম বলে চিঠিটা লেখা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ শুরু হয়েছে। যশোর শহরে মেহেরুল্লাহ ময়দানে চলছে মনোরম বৃক্ষমেলা। কেবল মেলার আয়োজন করলেই হবে না, বৃক্ষরোপণ সপ্তাহের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। মানুষের সমগ্র জীবনটাই বৃক্ষের উপর নির্ভরশীল । গাছপালা প্রয়োজনীয় অক্সিজেন উৎপাদন করে, রক্ষা করে পরিবেশের ভারসাম্য। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রেও বনভূমির গুরুত্ব কম নয়। ফল এবং কাঠ আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। তুলা বস্ত্র তৈরিতে প্রয়োজন হয়। আমাদের বেশকিছু খাদ্যদ্রব্য গাছ থেকে উৎপন্ন হয়ে থাকে। এছাড়া গৃহনির্মাণ ও আসবাবপত্র তৈরি করতে কাঠের ব্যবহার অপরিহার্য। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষায় গাছের কোন বিকল্প নেই।
তাই প্রতিবছর বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালনের মাধ্যমে দেশবাসীকে গাছপালার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলা দরকার। তোমার আব্বা আম্মাকে আমার ভক্তিপূর্ণ সালাম দেবে এবং আমার জন্য দোয়া করতে বলবে।
তোমার কল্যাণ প্রার্থনায়-
ইতি
ইমন আলী
নমুনা পত্র-২
পল্লবী, ঢাকা
২৩-০৯-২০২৫ ইং
প্রিয় রাহুল,
আমার শুভেচ্ছা নিও। অনেক দিন হলো তোমার কোনো খবর পাই না। আশা করি ভালো আছ। গতদিন আমাদের স্কুলে ‘বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা’ বিষয়ে একটি সেমিনার হয়ে গেল। সেই সেমিনারেই বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক ভালো ভালো কথা শুনলাম। তোমাকে সেগুলো জানাতেই এ চিঠি লিখতে বসেছি।
তুমি তো জানো, গাছ আমাদের পরম বন্ধু। আমরা শ্বাস-প্রশ্বাসে অক্সিজেন গ্রহণ করি, কার্বন-ডাই- অক্সাইড ত্যাগ করি। আর গাছ আমাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নেয়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু মানুষ তার প্রয়োজনে প্রচুর গাছ কাটছে। বন উজাড় হচ্ছে। তাতে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভীষণ ক্ষতি হচ্ছে।
তুমি হয়তো জানো, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি দেশের মূল ভূ-খণ্ডের কমপক্ষে পঁচিশ ভাগ বন থাকা দরকার। আমাদের দেশে তা নেই। বরং যা আছে তা-ও নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে। সভ্যতা ও উন্নয়নের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে কলকারখানা। রাস্তায় যানবাহনের চলাচল বাড়ছে। কলকারখানা ও গাড়ির ধোঁয়ায় বাতাসে বাড়ছে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ। ক্ষয় হচ্ছে বাতাসের ওজন স্তর। সৃষ্টি হচ্ছে গ্রিনহাউজ অ্যাফেক্ট। ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। দেখা দিচ্ছে নানা রোগ-ব্যাধি। এসবই ঘটছে বাতাসে অক্সিজেনের অভাবের কারণে। তাই বেশি বেশি গাছ লাগালে বাতাসে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ হবে। প্রকৃতির ভারসাম্য ফিরে আসবে। পরিবেশ দূষণমুক্ত হবে।
তা ছাড়া আমাদের জ্বালানির চাহিদার বেশির ভাগ পূরণ হয় বৃক্ষের মাধ্যমে। কাঠ থেকে আমরা বাড়িঘর এবং আমাদের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র প্রস্তুত করে থাকি। সুতরাং ভবিষ্যতের কথা ভেবে এখনই আমাদের অধিক হারে বৃক্ষরোপণ করা প্রয়োজন। বাড়ির চারপাশে, রাস্তার দুপাশে, পতিত জমিতে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে। বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনগণকে আরও সচেতন করে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, বৃক্ষ বাঁচলে আমরা বাঁচব। আজ এই পর্যন্তই। তোমার মা-বাবাকে আমার শ্রদ্ধা জানিও। চিঠি দিও।
ইতি, তোমার বন্ধু-
আশিক রহমান
নমুনা পত্র-৩
১৬. ০৬. ২০২৫
মোহাম্মদপুর, ঢাকা
প্রিয় সুমন,
শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিও। আশা করি ভালো আছ। আমিও সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে ভালো আছি। গতকাল তোমার একটি চিঠি পেয়েছি। এতে বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তুমি জানতে চেয়েছ। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন মুক্ত ও বিশুদ্ধ বাতাস। বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য প্রয়োজন দূষণমুক্ত পরিবেশ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রয়োজন সবুজ বৃক্ষের। মানুষের প্রয়োজন ও সভ্যতার উন্নয়নের স্বার্থে প্রতিনিয়তই মানুষ নিধন করছে বৃক্ষ, উজাড় হচ্ছে বন । ফলে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে।
মানুষ ও জীবজন্তু শ্বাস-প্রশ্বাসে গ্ৰহণ করে অক্সিজেন, আর ত্যাগ করে কার্বন ডাই-অক্সাইড। কিন্তু সবুজ বৃক্ষ তার পূর্ণ বিপরীত। এ প্রাকৃতিক নিয়মের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন বৃক্ষরোপণের। কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়ায় বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হ্রাস পাচ্ছে বাতাসের ওজোন স্তর। সৃষ্টি হচ্ছে গ্রিনহাউস ইফেক্ট। মানবসমাজে ঘটছে স্বাস্থ্যহানি ও নানা রোগব্যাধি। অন্যদিকে বায়ুস্তরের গ্যাসীয় পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঘূর্ণিঝড়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিক পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করলে বাতাসে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ হবে। প্রকৃতির ভারসাম্য ফিরে আসবে। পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকবে।
এছাড়া মানবসমাজের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মধ্যে জ্বালানি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের জ্বালানির চাহিদা সিংহভাগ পূরণ করা হয় বৃক্ষের মাধ্যমে। কাঠের মাধ্যমে আমরা বাড়িঘর, আসবাবপত্রসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুত করে থাকি। বর্তমান চাহিদার জন্য আমরা বৃক্ষ কাটছি। ভবিষ্যৎ চাহিদা আরও বেশি। সুতরাং প্রয়োজন অধিক হারে বৃক্ষরোপণ। মুক্ত পরিবেশ সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণের কথা চিন্তা করে আমাদের সকল নাগরিকের উচিত ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য দূষণমুক্ত পরিবেশ ও সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ করা । আজ আর নয়। তোমার চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।
ইতি-
তোমারই নয়ন
[বিশেষ দ্রষ্টব্য: পত্রের শেষে ডাকটিকেট সংবলিত খাম ও ঠিকানা ব্যবহার অপরিহার্য।]
এছাড়াও দেখুন: একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তোমার বন্ধুকে একটি চিঠি
নমুনা পত্র-৪
সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ
২০শে জুন ২০২৫ ইং
সুপ্রিয় শাহরিয়ার,
আমার প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিও। দুদিন আগে তোমার পত্রে বিস্তারিত জানতে পেরে খুশি হয়েছি। আজ তোমাকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে লিখছি। প্রতিবছরের মতো এবারও আমাদের কলেজে ‘বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ’ সফলভাবে পালিত হয়েছে। ব্যক্তিগত ও জাতীয় প্রয়োজনে বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালন করা অত্যাবশ্যক।
পৃথিবীজুড়ে প্রয়োজন অনুযায়ী বনভূমি নেই । এর অন্যতম কারণ হলো নির্বিচারে গাছ কাটা, বনভূমি উজাড় করে বসতবাড়ি নির্মাণ। একটি দেশের মোট ভূখণ্ডের ২৫% বনভূমি থাকা দরকার । সরকারি হিসেবে আমাদের দেশে প্রায় ১৭% বনভূমি রয়েছে । বাংলাদেশ ও বিশ্বে আশঙ্কাজনক হারে বনভূমি হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং পরিমাণমতো গাছ না লাগানো । আমরা জানি যে, গাছ থেকে আমরা জীবনধারণের প্রয়োজনীয় নানা উপাদান পাই । এর মধ্যে অন্যতম হলো অক্সিজেন । আমরা গাছ থেকে অক্সিজেন পাই আর গাছ আমাদের ত্যাগ করা বিষাক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে । কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণের মাধ্যমে গাছ বায়ুমণ্ডলকে দূষণমুক্ত রেখে মানুষের বাসযোগ্য করে রাখে।
এছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ নানাবিধ উপকার করে যাচ্ছে গাছপালা । শিল্পায়নের ধারায় আমাদের দেশেও প্রতিনিয়ত শিল্পকারখানা বেড়ে চলেছে। কলকারখানার ধোঁয়া, বর্জ্য পদার্থ, যানবাহনের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া প্রভৃতি বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। এসব কারণে আজ পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। পরিবেশকে রক্ষা করতে হলে বেশি বেশি গাছ লাগিয়ে বনভূমির পরিমাণ বাড়াতে হবে । আমরা বৃক্ষরোপণ সপ্তাহের কর্মসূচি হিসেবে কলেজ প্রাঙ্গণে গাছ লাগানো, চারপাশের পতিত জায়গায় গাছ লাগানো ও জনগণকে গাছ লাগাতে উৎসাহ দান প্রভৃতি কাজ করেছি । একুশ শতকের শপথ হোক ‘নির্মল পরিবেশ সুন্দর জীবন’। এজন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত গাছ লাগানো । আজ আর নয় । তুমিও এ ধরনের কাজে অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করছি।
ইতি-
তোমার বন্ধু এহসান ভূঁইয়া
[নোট: পত্র লেখা শেষে খাম এঁকে খামের ওপরে ঠিকানা লিখতে হয়]
আমরা আমাদের আগের পত্র লিখনে খাম আঁকা শিখিয়ে দিয়েছি, তাই এখানে দেয়নি। তোমরা যারা এখনও এটি আঁকতে পার না, তারা আগের লেখা গুলো দেখে নিবে।




