দন্ডিতের সাথে দন্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে ভাবসম্প্রসারণ

দন্ডিতের সাথে দন্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে ভাবসম্প্রসারণ

দন্ডিতের সাথে দন্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে ভাবসম্প্রসারণ শিখব আজকে আমরা। প্রিয় শিক্ষার্থীরা তোমরা অনেকেই এই ভাবসম্প্রসারণটির খোঁজে ছিলে, তাই আমরা আজকে ৪টি নমুনা নিয়ে হাজির হয়েছি। তোমাদের ক্লাসের সাথে মিলিয়ে যেটা উপযুক্ত মনে হয়, সেটাই শিখবে। আশা করি আজকের লেখাটা সকলেই উপভোগ করবে।

পোস্টের বিষয়বস্তুভাবসম্প্রসারণ লিখন
ভাবসম্প্রসারণ শিরোনামদন্ডিতের সাথে দন্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার
প্রযোজ্য শ্রেণিসমূহক্লাস ৬,৭,৮, এসএসসি, এইচএসসি
নমুনা আছে৪টি (১টি ছবিসহ)

দন্ডিতের সাথে দন্ডদাতা কাঁদে ভাবসম্প্রসারণ (১)

ভাব-সম্প্রসারণ: শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি বিচারকের করুণার প্রস্রবণ বিচারকার্যকে সর্বশ্রেষ্ঠ বিচার হিসেবে আখ্যা দিতে পারে। তাই নিরপেক্ষ বিচার করতে গিয়ে বিচারকের মানবিক ও অনুভূতিপ্রবণ মনোভাব বিচারকার্যের গুরুত্বকে বাড়িয়ে দিতে পারে।

পৃথিবী পাপ-পুণ্যের দোদুল দোলায় দোলায়মান। পাপ-পুণ্যের বিচারভার বিচারকের হাতে ন্যস্ত। পাপীর শাস্তিবিধান করা বিচারকের নিরপেক্ষ, নির্ভীক পদক্ষেপ ও কর্তব্য । দোষী বা নির্দোষ নির্ণয় করা বিচারকের জন্য কঠিনতম কাজ। তবুও, বিচারক অপরাধীকে দণ্ড দেওয়ার কালে অনুভূতিপ্রবণ ও সংবেদনশীল মানসিকতাবিশিষ্ট হয়ে বিচারকার্য সমাধা করবেন। এর বিপরীত আচরণে বিচারক হৃদয়হীন বলে পরিগণিত হবেন। দণ্ডদান বিচারকের কর্তব্য, তবুও সেই দণ্ড প্রয়োগের পশ্চাতে দণ্ডিতের প্রতি মানুষ হিসেবে যদি বিচারকের সহমর্মিতা না থাকে, তবে সে বিচার নিপীড়নে পর্যবসিত হয়। অনেক অপরাধই সংঘটিত হয় পরিবেশ-পরিস্থিতির বাধ্যতামূলক চাপে। সুতরাং দণ্ডদানকারী সমাজও পরোক্ষভাবে অপরাধী গড়ে তোলে। তাই অপরাধীকে দণ্ড যদি দিতেই হয়- তবে তাতে যেন অবশ্যই লেগে থাকে তার প্রতি মমত্ববোধের ছোঁয়া।

বিচারকের অন্তরে যদি দণ্ডিতের জন্য সহবেদনা না থাকে, তবে সে বিচার কখনো সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারের শিরোপা পায় না।

দন্ডিতের সাথে দন্ডদাতা কাঁদে ভাবসম্প্রসারণ (২)

মূলভাব: অন্যায়ের শাস্তি অনিবার্য। বিচারক অপরাধীকে শাস্তিবিধান কালে শাস্তি ভোগকারীর বেদনা যখন বিচারক মনেও মেনে নেয়, সে বিচারই হয় সফল বিচার।

ভাবসম্প্রসারণ: মানুষ সামাজিক জীব। তাই সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে মানুষের মাঝ থেকেই কেউ কেউ বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হয়। তাদের কাজ অন্যায়কারীর জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা, যাতে সমাজে সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকে। ন্যায় করার প্রতি ঝোঁক যেমন মানুষের, তেমনি মানুষের অন্যায় করার প্রতিও ঝোঁক রয়েছে। মানুষ যখন কুপ্রবৃত্তিতাড়িত হয় তখন সে ঝোঁকের মাথায় অন্যায় করে বসে। তার এ অন্যায় কাজের জন্য সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই রয়েছে বিচারের ব্যবস্থা।

বিচারক হচ্ছে সমাজের বিবেক। তাই এ দায়িত্ব যার স্কন্ধে ন্যস্ত তাকে হতে হবে সৎ ও নিরপেক্ষ। বিচারের বেলায় বিচারকের মনে অহংকার, ঘৃণা বা বিতৃষ্ণা থাকলে তখন হবে অবিচার। বিচারকের কাছে আপন-পর সবাই সমান। বিচারকের কাজ মানুষের বিচার করা নয়, তার অন্যায় কর্মের বিচার করা। তাই পাপীকে নয়, চোরকে নয়- পাপকর্ম, চৌর্যবৃত্তিকে ঘৃণা করতে হবে। বিচারক একজন বিচারক এবং মানুষও। তার দায়িত্ব অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া। তার উদ্দেশ্য অপরাধপ্রবণতা কমানোর জন্য যেমন শাস্তি প্রদান, তেমনি মানবিক দৃষ্টি দিয়ে সেই মানুষটির প্রতিও হৃদয়বান হওয়া। ফলে দণ্ডিতকে দণ্ড দেওয়ার তার যে বেদনা, সে বেদনা যদি বিচারকের বুকেও বাজে, তাহলে সে-ই হবে শ্রেষ্ঠ বিচারক। পক্ষান্তরে, বিচারক যদি নিষ্ঠুরের মতো কেবল শাস্তি দিয়ে শান্তি পান তাহলে সে বিচার হবে অবিচার, বিচারকের কাজ তখন পৈশাচিক বলে বিবেচিত হবে। সুতরাং, দণ্ডদাতা যদি দণ্ডিতের সাথে সমান ব্যথায় ব্যথিত হন- তবেই মানবতা, মনুষ্যত্ব রক্ষা পাবে। সেই বিচার হবে ন্যায় বিচার; যা সমাজের কল্যাণ বয়ে আনবে।

মন্তব্য: দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা সমান ব্যথায় ব্যথিত হলেই সে বিচার হয় ন্যায়বিচার।

এছাড়া পড়তে পারেন: দুর্নীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপ ভাব সম্প্রসারণ

দন্ডিতের সাথে দন্ডদাতা কাঁদে ভাবসম্প্রসারণ (৩)

ভাবসম্প্রসারণ: দন্ড দিতে গিয়ে যদি দন্ডদাতা ব্যথিত হয় তবে সেই হচ্ছে প্রকৃত বিচারক। অপরাধীর প্রতি বিদ্বেষ থাকলে বিচারক সঠিক বিচার করতে পারেন না। ভবসংসারে মানুষ বিভিন্ন ধরণের অন্যায় এবং পাপ কাজ করে থাকে। সে অন্যায় বা পাপের বিচারের বিধান আছে আইনগতভাবে। সমাজে অন্যায়, পাপ ইত্যাদি চলতে দেয়া যায় না বলে মানুষ আইন তৈরি করেছে অন্যায় এবং পাপকে প্রতিরোধ করতে, নির্মূল করতে। নীতি-নিয়মের মাধ্যমে বিচারালয়ে বিচারক আইনের ধারায়, ন্যায়ের ভিত্তিতে অপরাধীর শাস্তি প্রদান করেন। নির্মম বা নিষ্ঠুর হলেও বিচারক তা দিতে বাধ্য হন। কারণ আইনের বিধানই হচ্ছে পাপের শাস্তি প্রদান।

বিশ্ব বিধানও হচ্ছে বিচারের মাধ্যমে অন্যায়কারীকে শাস্তি দিতে হবে। তবে অন্যায় মানুষ ভুলবশত যে কোন অশুভ মুহুর্তে করে থাকে এবং মানুষের পদস্খলন ঘটে থাকে। তাই বিচারকের ভূমিকা হবে পক্ষপাতহীন নিষ্ঠুর বিচারক কোনদিন সত্যের নির্মল আলোক পাপীর হৃদয়ে পৌঁছে দিতে পারেন না। হৃদয়বান বিচারকের মানুষের প্রতি মমতা থাকে বলে তাঁর বিচার সুষ্ঠু ও যথাযথ হতে বাধ্য। যে দন্ডপ্রাপ্ত সে তার কৃতকর্মের জন্য কাঁদে এবং যিনি দন্ডদাতা তাঁর হৃদয়ও যদি দন্ডিতের সাথে একই ব্যথায় ব্যথিত হয় তাহলে সে বিচার পক্ষপাতহীন হয়। এ রকম বিচারকই ন্যায় বিচারের পথ প্রদর্শক, সঠিক পথের পথিক। হিংসা দিয়ে মহত্ব কেনা যায় না। নির্মমতা মানুষকে হৃদয়হীন করে তোলে। সহানুভূতি মানুষের হৃদয়কে কোমল ও সুন্দর এবং উদার করে তোলে। বিচার করার সময় অপরাধীর প্রতি মমত্ববোধ থাকা দরকার। তবেই বিচার ন্যায় ও সুষ্ঠু হতে পারে। অপরাধীর প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষ বিচারকের মধ্যে না থেকে দন্ডিতের প্রতি ব্যথিত হওয়া উচিত।

দন্ডিতের সাথে দন্ডদাতা কাঁদে ভাবসম্প্রসারণ (৪)

ভাব-সম্প্রসারণ: অপরাধী ও বিচারক দুজনই মানুষ। তাই অপরাধীকে অন্যায় থেকে মুক্ত না করে শাস্তি দিয়ে বিচারক মনে মনে কষ্ট পান। অপরাধীকে শাস্তি বা দণ্ড প্রদান বিচারের লক্ষ্য এবং বিচারকের কর্ম। এ শাস্তি প্রদান মূলত অপরাধ দমনের জন্য। দণ্ড বা শাস্তি ছাড়া অপরাধীর অপরাধ প্রবণতা কমাতে পারে না। তবে সে দণ্ড অর্থহীন, যদি না অপরাধীর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে তার মধ্যে অন্যায়ের প্রতি ঘৃণাবোধ জন্মানো না যায়। পাপকে ঘৃণা করা উচিত। কিন্তু পাপীর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পাপকার্য থেকে তাকে বিরত থাকবার চেষ্টা করতে হবে। দণ্ডভয়ে অন্যায়কারী দূরে থাকে ঠিকই কিন্তু তার মানসিকতার পরিবর্তন হয় না।

তাই তার মানসিকতার পরিবর্তনের প্রয়োজন। তখনই সম্ভব যখন তার অন্যায় কর্মের পশ্চাতে যে কারণ বিদ্যমান, সে কারণ অপসারিত করা যায়। হাজী মুহম্মদ মুহসীনের ঘরে যে চোর ঢুকেছিল, তিনি তাকে শাস্তি দেননি; বরং চুরি যাতে না করে তার ব্যবস্থা করেছিলেন। তার সহানুভূতি প্রদর্শনের জন্য চোর ঝরঝর করে কেঁদে পুনরায় চুরি না করার শপথ করেছিল। দরদ ও মমতা দিয়ে যদি অন্যায়কারীর বিবেক জাগানো যায়; তবে তার পরিবর্তন হয়। সে ভালো মানুষ হয়ে ওঠে। মানবিক সম্পর্কের মধ্যে অন্যায়কারীকে বিবেচনা করলে সামাজিক অপরাধ কমে আসবে। হ্রাস পাবে অন্যায়কারীদের সংখ্যা। তাই প্রতিশোধ গ্রহণ দণ্ডদানের লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। অপরাধীকে শাস্তি না দিয়ে তার ভিতরে মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলা সমাজ ও জাতির কর্তব্য।

কেমন হয়েছে কমেন্ট করে জানাতে পারেন, বানানে কোন সমস্যা থাকলে, কিংবা কোন জিজ্ঞাসা থাকলেও আমাদের অভহিত করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top