একতাই বল ভাবসম্প্রসারণ: হ্যালো স্টুডেন্টস, আজকে একতাই বল ভাবসম্প্রসারণ এর ৪টি ভ্যারিয়ান্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। এটি তোমাদের সকলেরই সিলেবাসে কম বেশি থাকে, তাই এটি পরিক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এখানে সকল ক্লাসের জন্যই লেখা হয়েছে ছোট বড় করে। তাহলে আর দেরি কেন, এখনি শিখতে বসে পড়।
| পোস্টের বিষয়বস্তু | ভাবসম্প্রসারণ লিখন |
| ভাবসম্প্রসারণ টপিক | একতাই বল/দশের লাঠি একের বোঝা |
| প্রযোজ্য শ্রেণিসমূহ | ক্লাস ৬,৭,৮, এসএসসি, এইচএসসি |
| নমুনা আছে | ৪টি |
একতাই বল ভাবসম্প্রসারণ ক্লাস ৬
ভাব-সম্প্রসারণ: মানুষ সামাজিক জীব। পরিবারের প্রত্যেকে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। এই পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে গড়ে উঠেছে মানবসমাজ; মানুষের একতাবোধ। তাই মানবজীবনের অস্তিত্বের সঙ্গে একতার গভীর সম্পর্ক। মানুষকে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও জীবনযাপন করতে হয়। প্রতিকূল পরিবেশে শত্রুর মোকাবেলা করার জন্য মানুষের দরকার সংঘবদ্ধ শক্তির। একতাবদ্ধ জীবনে আছে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। ঐক্যবদ্ধ জাতিকে কোনো শক্তিই পদানত করতে পারে না।
একতার কল্যাণ প্রতিফলিত হয় ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনেও। একজনে যে কাজ করতে পারে, দশজনে তার বহুগুণ কাজ করা সম্ভব। এভাবে জাতি একতার গুণে বড় হয়। আজকের বিশ্বে যারা উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে পরিচিত তারা নিজেদের মধ্যে সব ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় ঐক্যে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। যে জাতি ঐক্যবদ্ধ নয়, সে জাতির উন্নতি অসম্ভব। ব্যক্তির ক্ষেত্রে বন্ধুবান্ধবহীন নিঃসঙ্গ জীবন যেমন বিভ্রান্তিকর, তেমনি একতাহীন জাতির ধ্বংস অনিবার্য। ব্যক্তিজীবনের স্বার্থে, জাতীয় জীবনের কল্যাণে এবং মানবজাতির মঙ্গলের জন্য মানুষের একতাবদ্ধ থাকা একান্তই অপরিহার্য।
একতাই বল ভাবসম্প্রসারণ ক্লাস ৭
ভাব-সম্প্রসারণ: একতায় উত্থান, বিভেদে পতন। দশের লাঠি একের বোঝা। নির্দিষ্ট সময়ে দশজনে যে কাজ করতে পারে একজনের পক্ষে তা অসম্ভব।
আমাদের প্রতিদিন নানা ধরনের কাজ করতে হয়। একা করার মতো কোনো কাজ আমরা একাই করতে পারি, আবার কোনো কোনো কাজ করতে অনেক লোকের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে অনেকের সমবেত প্রচেষ্টা দরকার। আমরা বৃদ্ধ এবং তার চার ঝগড়াটে ছেলে সম্পর্কে যে গল্পটি চালু আছে তা জানি। বৃদ্ধ লোকটি তার সন্তানদের এক আঁটি লাঠি ভাঙতে আদেশ করলে তারা সকলে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। আঁটিটি এত শক্ত ছিল যে, তারা এটা ভাঙতে পারল না। তখন বৃদ্ধলোকটি আঁটিটি খুলে দিলেন এবং একটি করে তাদের লাঠিগুলো ভাঙতে বললেন। তারা সহজে এগুলো ভেঙেছিল। এতে প্রমাণিত হলো যে, ঐক্যে উন্নতি আর বিভক্তিতে পতন।
যদি কোনো জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকে তাহলে যেকোনো বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে। জাতীয় জীবনে ঐক্য উন্নতি, শান্তি ও সুখ বয়ে আনে। সহজ ও সুন্দরভাবে কোনো কাজ করতে হলে অনেক লোকের দরকার হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি ক্ষুদ্র মৌমাছি একা কোনো মৌচাক তৈরি করতে পারে না। অথচ অসংখ্য মৌমাছির মিলিত প্রচেষ্টায় বিশাল মৌচাক তৈরি হয়। আবার শত্রু দ্বারা মৌচাক আক্রান্ত হলে মৌমাছিরা একতাবদ্ধ হয়ে শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সহজে কেউ তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। আসলে একা যে কাজ করা খুবই কঠিন, দশজনে মিলে সে কাজ অতি সহজেই সমাধা করা সম্ভব।
বলা হয়, ‘Unity is strength’. সকলের মিলিত শক্তিই প্রকৃত শক্তি। সকলে মিলে একটা কাজ করলে তাতে মনে প্রশান্তি আসে, সমঝোতার সৃষ্টি হয়।
দেখতে পারেন: জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান ভাবসম্প্রসারণ
একতাই বল ভাবসম্প্রসারণ ক্লাস ৮
ভাব-সম্প্রসারণ: যে কাজ একজনের পক্ষে করা কষ্টকর তা অনেকের পক্ষে একেবারে সহজ। এ জীবন কর্মময়। কাজ সাধারণত আমরা দু’ ভাবে করতে পারি। কখনো একা, কখনো অনেকে মিলে। কোনো কাজ একা করলে তার সাফল্য ব্যর্থতা একারই। ব্যর্থ হলে দশজনের কাছে লাঞ্ছিত হতে হয়। নিজের কাছেও খারাপ লাগে। উৎসাহে ভাটা পড়ে। সকলে মিলে কাজ করেও অনেক সময় সফল হওয়া যায় না। কিন্তু সে ব্যর্থতা কারও একার নয়। তাই ব্যক্তিবিশেষের লজ্জা ও নিরুৎসাহিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ব্যর্থতার দুঃখ সবাই মিলে ভাগ করলে পরিমাণে অনেক কম হয়। সে দুঃখের তীব্রতা কম থাকে। তাছাড়া লজ্জিত হওয়ার ভয়ও থাকে না। ছোট ছোট কাজ মানুষ একা করতে পারে, কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু বড় বড় কাজ কখনো একজনের শক্তি ও পরিশ্রমে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। একা করতে গেলে বহু সময় লেগে যায়। তাতে কাজ সর্বাঙ্গীণভাবে সুষ্ঠু ও সুন্দর হয় না এবং যে উদ্দেশ্যে কাজটা শুরু করা হয়েছিল তা সাধিত হয় না।
আমরা দেখেছি যে, জগতের যেকোনো বড় কাজের পশ্চাতেই অনেক লোকের অবদান রয়েছে। বর্তমান দুনিয়ার মানুষ যে দুস্তর সমুদ্র, পর্বতশৃঙ্গ, মহাশূন্য জয় করেছে; এর পশ্চাতে রয়েছে কত মানুষের সম্মিলিত ইচ্ছা-সাধনা। সে সাধনার প্রথম স্তরে কত না পরাজয়, কত না বিপর্যয় ঘটেছে। তাতে যদি কেউ লজ্জিত বা ব্যথিত হয়ে মুষড়ে পড়ত, তাহলে পরবর্তীকালে এ জয় কিছুতেই সম্ভব হতো না।
একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকবাহিনীর প্রথম আঘাতে বাঙালিরা ক্ষতিগ্রস্ত, পর্যুদস্ত ও বেসামাল হয়ে পড়ে। কিন্তু পরে সমস্ত বাঙালি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একযোগে কাজ করেছিল বলে তারা নিরুৎসাহিত হয় নি। একাকী কাজ না করে দশজনকে নিয়ে করলেই পরাজয়ে লজ্জার আগাম ভাবনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মিলেমিশে কাজ করলে জয়ে যেমন আত্মপ্রসাদ থাকে, পরাজয়েও তেমন কোনো ক্ষোভ বা দুঃখের কারণ থাকে না, যা লাভ হলো বা হারাল তা সবারই কৃতকর্মের ফল; এ একতাতেই আনন্দ। তাই ‘পাছে লোকে কিছু বলে’-এ মনোভাব ও জড়তাকে দূরে ঠেলে দিয়ে আমাদের সকলের সহযোগিতার মাধ্যমে যেকোনো কাজ করা উচিত।
একতাই বল ভাবসম্প্রসারণ – এসএসসি, এইচএসসি
মূলভাব: অনেক সময় একত্রে কাজ করেও সাফল্য লাভ করা যায় না। কিন্তু এতে লজ্জার কিছুই নেই। এ ব্যর্থতা একার নয়, সকলের। আর এতে ব্যক্তি বিশেষের লজ্জা বা নিরুৎসাহিত হওয়ার কোন কারণ নেই।
সম্প্রসারিত ভাব: মানুষ সামাজিক জীব বলে সে সমাজে একা বাস করতে পারে না। সামাজিক জীবনে এমন অনেক কাজ আছে যা একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। যে কাজ একা করা সম্ভব না, অন্যের সাহায্যে করতে হয়, সে কাজ দশজনে মিলেমিশে করা সহজসাধ্য। কারণ একতাই বল । অর্থাৎ একজনে যে কাজ পারে না, দশজনে সে কাজ অল্প সময়ে সহজেই করতে পারা যায়। সৃষ্টির দিকে তাকালে দেখা যায় যে, একা কিছুই সৃষ্টি হয়নি। ক্ষুদ ক্ষুদ্র বালুকণা নিয়ে পৃথিবী গড়ে উঠেছে, বিন্দু বিন্দু জল নিয়ে নদী বা সমুদ্র সৃষ্টি হয়েছে। অসংখ্য বৃক্ষরাজির সমাহারে বনের শোভাময় অবস্থিতি, আকাশে অসংখ্য তারকা মিলে সৌন্দর্যের মেলা বসেছে। সুতরাং সম্মিলিত চেষ্টা ও অবস্থানে সৃষ্টির সার্থকতা।
কোন কাজ একা সমাধা করা যায় না। আবার একা করতে গেলেও সময় ও শক্তির অযথা অপচয় হয়। সকলের প্রচেষ্টায় কাজ করার পর ব্যর্থতা আসলেও তাতে লজ্জার কিছু থাকে না। ব্যর্থতার গ্লানি সবাই ভাগাভাগি করে নিলেও তাতে একক কোন লজ্জা বা ব্যর্থতা থাকে না। দশজনের ঐক্যে যেমন প্রবল শক্তি সঞ্চিত হয়, তেমনি সমাজের বহু অসাধ্য কাজও সহজসাধ্য হয়ে যায়। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে কাজের সাফল্যের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। তাই মিলিত ও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার মধ্যে আনন্দও পাওয়া যায়। এজন্য পরিবার ও সমাজ জীবনে যেমন ঐক্যের প্রয়োজন, তেমনি জাতির জীবনেও জাতীয় সত্তা রক্ষার্থে ঐক্যের প্রয়োজন। যেহেতু আমরা প্রত্যেকেই একে অন্যের উপর নির্ভরশীল, তেমনি কোন কর্মকে তুচ্ছজ্ঞান না করে সকলে মিলে সমাধা করলে একটি উন্নত জাতি গড়ে তোলা যায়।
মন্তব্য: একাকী কাজ না করে দশজনকে নিয়ে কাজ করলেই পরাজয়ের লজ্জার আগাম ভাবনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। একটি লাঠি যেমন একা ভাঙা সহজ, তেমন এক বোঝা লাঠি একত্রে একা ভাঙা কঠিন। কিন্তু লাঠিগুলো দশজনে ভাগ করে ভাঙলে অল্প সময়ে অতি সহজে ভাঙা যাবে। আর সবাই মিলে করলে লজ্জা দেওয়ার, লজ্জা পাওয়ার বা ভর্ৎসনা করার কেউ থাকে না। তাই সাফল্য লাভ করতে হলে “পাছে লোকে কিছু বলে”- এ মনোভাব ও জড়তাকে দূরে ঠেলে দিয়ে আমাদের সকলের সহযোগিতার মাধ্যমে যে কোন কাজ করা উচিত।




