জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান ভাবসম্প্রসারণ হচ্ছে আজকে আমাদের টপিক। তোমরা অনেকেই এই ভাবসম্প্রসারণটি শিখতে আগ্রহী, তাই আমরা ক্লাস ৬ থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সকল শ্রেণির জন্য তিনটি ফরম্যাটে ভাবসম্প্রসারণটা লিখেছি। আশা করি তোমাদের ভাল লাগবে, চল তাহলে শুরু করি-
- পোস্টের বিষয়বস্তু: ভাবসম্প্রসারণ লিখন
- ভাবসম্প্রসারণ টপিক: জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান
- প্রযোজ্য শ্রেণিসমূহ: ক্লাস ৬, ৭, ৮, এসএসসি, এইচএসসি
- নমুনা দেয়া আছে: ৩টি
জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান ভাবসম্প্রসারণ – শ্রেণি ৬
ভাব-সম্প্রসারণ: সৃষ্টির অন্যান্য প্রাণির থেকে মানুষকে আলাদা করেছে তার বিবেক বা জ্ঞান, যা অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে নেই। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই জ্ঞান বা বিবেক সুপ্ত অবস্থায় থাকে। অনুশীলনের মাধ্যমে তাকে জাগিয়ে তুলতে হয়। জ্ঞান মানুষকে যোগ্যতা দান করে। নানা বিদ্যায় পারদর্শী করে তোলে। জ্ঞানের আলোকেই মানুষের জীবন বিকশিত হয়ে ওঠে। তাই মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব লাভের জন্য জ্ঞানের সহায়তা অপরিহার্য। অন্য প্রাণীর সঙ্গে মানুষের পার্থক্য এখানেই। জ্ঞানবান মানুষ কখনো খারাপ কাজ করতে পারে না। তার বিবেক তাকে খারাপ আচরণ করতে বাধা দেয়। অপরদিকে জ্ঞানহীন মানুষ পশুর মতো নির্বোধ। পশুর যেমন জ্ঞান নেই। সে ন্যায়-অন্যায় বোঝে না। আপন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে না। জ্ঞানহীন ব্যক্তিরও তেমনি কোনো বিবেক নেই। জ্ঞানের অভাবে তারা আধুনিক জীবনের সম্পূর্ণ স্বাদ উপভোগ করতে পারে না।
জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান ভাবসম্প্রসারণ – শ্রেণি ৭, ৮
ভাব-সম্প্রসারণ: মানুষকে আলোকিত করে জ্ঞান। আর জ্ঞানীরা হন রুচিশীল, উদার, বিনয়ী মানুষ। পশুর স্বভাবে এই বৈশিষ্ট্য নেই। জ্ঞানের অনুপস্থিতিতে মানুষ ও পশুর মধ্যে কোনো ব্যবধান থাকে না।
জ্ঞান মানুষকে সৃষ্টির অন্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে। এ এক অসাধারণ গুণ- যা দিয়ে মানুষ ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্য বিচার করতে পারে। সিদ্ধান্ত নিতে পারে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে। জ্ঞান মানুষের বিবেক-বুদ্ধিকে জাগিয়ে দেয়, সাহসকে পূর্ণতা দেয় কল্যাণের পথে, আলো ও ভালোর পথে। ফলে সে অন্যায় ও অপকর্ম করতে পারে না। মিথ্যার সঙ্গে মিশে যেতে পারে না। মানুষ হিসেবে সেরা হতে হলে জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই। জ্ঞানহীন মানুষ অবলা পশুর মতোই নির্বোধ আরেক প্রাণীমাত্র। তাই সে পশুসুলভ আচার-আচরণে অভ্যস্ত হয়ে নানা রকম পাশবিকতায় জড়িয়ে পড়ে। তার বিবেক তাকে বাধা দেয় না। জ্ঞানহীনতাই তার বিবেককে অন্ধকারে ঘুম পাড়িয়ে রাখে।
জ্ঞান-বিদ্যা-বুদ্ধির জন্যই মানুষ সৃষ্টির সেরা। জ্ঞান-বুদ্ধিবলেই মানুষ অন্য প্রাণীর ওপর প্রভুত্ব করে। আলোকিত জীবনের স্বাদ পেতে জ্ঞানের কোনোই বিকল্প হয় না। জ্ঞানই শক্তি, জ্ঞানই আলো। জ্ঞানহীনতা অন্ধকার। জ্ঞানহীন অন্ধ মানুষ মূলত পশুর সমান।
আরো দেখুন: মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন, বিলাস ধন নহে ভাবসম্প্রসারণ
জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান ভাবসম্প্রসারণ – এসএসসি ও এইচএসসি
ভাব-সম্প্রসারণ: মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। এ শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান যে লাভ করেছে তা একমাত্র তার জ্ঞান-বুদ্ধির জন্য। বিচারবুদ্ধি ও প্রজ্ঞা দ্বারা সে তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দেয়। অন্যান্য প্রাণীর সাথে মানুষের তফাত এই যে, মানুষ কোনোকিছু পর্যালোচনাপূর্বক বিবেক দিয়ে ভালো-মন্দ চিহ্নিত করতে পারে। অন্যান্য জীবের মধ্যে এ উপাদানটি নেই। প্রকৃতিগতভাবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে জ্ঞান সুপ্ত অবস্থায় থাকে। তবে অনুশীলনের মাধ্যমে জ্ঞানের বিকাশ ঘটে। পশু জ্ঞানহীন ও নির্বোধ। তাই শুধু নিজেকে বাঁচিয়ে রাখাই তার কাজ। সেজন্য বড় পশু ছোটগুলোকে হত্যা করে আহার করে।
জ্ঞানহীন মানুষও পশুর মতো আচরণ করে। জ্ঞানের আলো পায়নি বলে স্রষ্টার সৃষ্ট শ্রেষ্ঠ জীব হয়েও তার বুদ্ধি বিকশিত হয়নি। তাই সে অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে আছে। সে নিজেকে চিনতে পারেনি ও মানুষ হিসেবে তার কর্তব্য কী তা বুঝে উঠতে পারেনি। তাই তার মাঝে পশুত্বই প্রাধান্য বিস্তার করেছে। ফলে সে স্বার্থান্ধ হয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য পশুর মতো আচরণ করেছে। এভাবে সে মনুষ্যত্বের অবমাননা করছে এবং পৃথিবীতে মানবজীবনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দিচ্ছে। এসব পশুর ন্যায় কর্মকাণ্ড থেকে মুক্তি পেতে হলে জ্ঞান অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। জ্ঞানই মানুষকে সৎ, সুন্দর আদর্শবানরূপে গড়ে তোলে। মানুষকে পরিপূর্ণতা এনে দেয়। সুতরাং পৃথিবীর বিখ্যাত দার্শনিক প্লেটোর ভাষায় বলা যায়, “অজ্ঞ থাকার চেয়ে পৃথিবীতে না জন্মানোই ভালো, কারণ অজ্ঞতা সব দুর্ভাগ্যের মূল।” আমাদের প্রিয় নবি হজরত মুহম্মদ (স) বলেছেন, “সুদূর চীন দেশে গিয়ে হলেও জ্ঞান চর্চা কর।”
জ্ঞানহীন ব্যক্তি বর্বর। তার ভালো-মন্দ জ্ঞান নেই। সে পশুর সমতুল্য। সে জ্ঞানের অভাবে এ পৃথিবীতে আপন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অক্ষম। সেহেতু সবারই জ্ঞানচর্চা করা উচিত।
আজকে এই পর্যন্তই থাক, আশা করা যায় তোমাদের পছন্দ হয়েছে। তারপরও কোন অভিযোগ, প্রশ্ন থাকলে নিচে মন্তব্য করে জানাতে পার, ধন্যবাদ।




