গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন ভাব সম্প্রসারণ: যেকোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কবিতাংশের ভাব সম্প্রসারণ হল – “গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন”। তাই আজকে আমরা ভাব সম্প্রসারণটির সর্বোচ্চ সংখ্যক নমুনা তোমাদের জন্য লিখেছি। নিচে সকল নমুনা উপস্থাপণ করা হল, তোমার কাছে যেই স্যাম্পল তুলনামূলক সহজ লাগে শিখে নাও।
| পোস্টের বিষয়বস্তু | ভাবসম্প্রসারণ লিখন |
| ভাবসম্প্রসারণ টপিক | গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন |
| প্রযোজ্য শ্রেণিসমূহ | ক্লাস ৬, ৭, ৮, এসএসসি, এইচএসসি |
| নমুনা আছে | ৫টি |
গ্রন্থগত বিদ্যা ভাব সম্প্রসারণ – ক্লাস ৬
ভাব-সম্প্রসারণ: ধন-সম্পদ যদি নিজের নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে দরকারের সময়ে তা কোনো কাজে আসে না। একইভাবে জ্ঞান যদি শুধু বইয়ের পাতায় আটকে থাকে, সে-বিদ্যা ব্যক্তি তার নিজের জীবনে কাজে লাগাতে পারে না।
মানুষের অভিজ্ঞতা ও প্রমাণ লব্ধ জ্ঞান বইয়ের মধ্যে সঞ্চিত থাকে। বই পাঠ করলে পৃথিবীর সব ধরনের জ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। কেউ যদি নিয়মিত বই পড়ে তাহলে সে ধীরে ধীরে নিজেকে জ্ঞানী করে তুলতে পারবে। বই থেকে অর্জিত এই জ্ঞান দিয়ে সে নিজের বা অন্যের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। বই থেকে আহরিত জ্ঞান থেকে সে নিজে যেমন আলোকিত হতে পারে, অন্যকেও আলোকিত করতে পারে। কিন্তু জ্ঞান যদি বইয়ের মধ্যেই শুধু আবদ্ধ থাকে, তাহলে তা কারো কোনো কাজে আসে না। ধরা যাক, কোনো ব্যক্তি লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে হাজার হাজার বই কিনলেন আর তা দিয়ে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করলেন। লাইব্রেরির তাকে তাকে বইগুলোকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখলেন। কিন্তু জ্ঞানের কোনো বিষয়ে কেউ যদি তাঁকে প্রশ্ন করে, তিনি তার যথাযোগ্য জবাব দিতে ব্যর্থ হবেন। আবার বইয়ের বিদ্যা না বুঝে কেবল ঠোঁটস্থ বা মুখস্থ করলেই হবে না। এই বিদ্যার প্রায়োগিক দিকটিও উপলব্ধি করতে হবে। অনেকটা জায়গা-জমি বা অর্থের মতো। নিজের সম্পদ-সম্পত্তি অন্যের হাতে থাকলে তা ভোগ করা যায় না। অন্যের কাছে থাকা অর্থ আর বইয়ের পাতার সীমাবদ্ধ জ্ঞান এভাবে সমার্থক হয়ে যায়।
বইকে শুধু পরীক্ষা পাশের উপকরণ মনে করলে চলবে না। বইয়ের জ্ঞানকে জীবনে কাজে লাগাতে পারলে তবেই সার্থকতা।
গ্রন্থগত বিদ্যা ভাব সম্প্রসারণ – ক্লাস ৭
ভাব-সম্প্রসারণ: জ্ঞান-বুদ্ধি ও অর্থ-সম্পদ যদি মানব কল্যাণে না লাগে তবে সেই জ্ঞান-বুদ্ধি ও অর্থ-সম্পদের কোনো মূল্য নেই। তা তখন কাগুজে বাঘ হয়ে যায়। মানুষের প্রয়োজনে, সমাজ ও দেশের প্রয়োজনে কাজে লাগলেই বিদ্যা ও বৈভবের প্রকৃত সার্থকতা প্রমাণিত হয়।
বই মানুষকে আলোকিত করে। বিদ্যার আলোয় ফোটে মানবিক চোখ। আবার অর্থ-সম্পদও মুছে দিতে পারে দুঃখ-কষ্ট । এনে দিতে পারে আনন্দমুখর সফল জীবন । সমাজ ও রাষ্ট্র, দেশ ও দশের কল্যাণে যে জীবন ব্যয়িত হয়, সানন্দচিত্তে এরকম বিদ্যা ও অর্থ-সম্পদ নিয়ে গৌরব করা যায়। কষ্ট করে, পরিশ্রম করে, সাধনা করে এই বিদ্যা ও বিত্ত উপার্জনের যথার্থতা খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু গ্রন্থগত বিদ্যা এবং অন্যের কাছে থাকা ধনসম্পত্তির মতো তা যদি সময়মতো ব্যহার করা না যায়, সমাজের কল্যাণে না আসে তাহলে তার কোনো মূল্য থাকে না । এই ধরনের শিক্ষা ও সম্পদ গুরুত্বহীন, তাৎপর্যহীন ও মূল্যহীন। কেননা বিদ্যার আলোয় আলোকিত হয়ে সমাজকে আলোকিত করতে হবে না হলে কেতাবি বিদ্যা কেতাবেই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে। তেমনি অর্থ- সম্পদও যদি নিজের উপকারে না আসে, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর মঙ্গলে ব্যবহৃত না হয় তাহলে এই অর্থ-সম্পদের কোনো তাৎপর্য থাকে না।
প্রয়োজনের সময় যে জ্ঞান-বিদ্যা কাজে লাগে না, বিপদে-আপদে যে সম্পদ কাজে লাগে না, উপকারে আসে না, সেই বিদ্যা ও সেই সম্পদ থাকলেই কী না থাকলেই কী। এসব তো তখন খেলনা হয়ে যায়। নিরর্থক হয়ে যায়।
গ্রন্থগত বিদ্যা ভাব সম্প্রসারণ – ক্লাস ৮
মূলকথা: গ্রন্থের বিদ্যা অর্জিত না হলে এবং ধন-সম্পদ নিজের কাছে না থাকলে প্রয়োজন অনুযায়ী কাজে লাগানো যায় না । তাই এরূপ বিদ্যাকে বিদ্যা এবং ধনকে ধন বলে আখ্যায়িত করা অবান্তর।
সম্প্রসারিত ভাব: গ্রন্থগত বিদ্যা যা আত্মস্থ করা হয়নি এবং এমন ধন-সম্পদ যা নিজের করায়ত্ত হয়নি- এ সমস্তই নিরর্থক । কারণ প্রয়োজনীয় মুহূর্তে এগুলোর যথাযথ ব্যবহার করা সম্ভব হয় না । পৃথিবীতে মানুষের জীবনে ধন-সম্পদ ও বিদ্যার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু বিদ্যা যদি গ্রন্থের ভেতরেই মলাটবদ্ধ অবস্থায় অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকে, মানুষ যদি তা আত্মস্থ না করে কিংবা আত্মস্থ করে চলমান জীবনে কাজে লাগাতে না পারে, তবে সে বিদ্যা মূলত কোনো বিদ্যাই নয়। মলাটবদ্ধ গ্রন্থের বিদ্যাকে মানুষের জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। তবেই সে বিদ্যা পৃথিবীর মানুষের কল্যাণ বয়ে আনবে। অন্যদিকে, নিজের অর্জিত ধন-সম্পত্তি যদি অন্যের কাছে রক্ষিত থাকে, তবে প্রয়োজনের সময় সেই সম্পত্তি উদ্ধার করাও অনেক সময় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বরং নিজের কাছে থাকা সম্পত্তিই প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করা সম্ভব। সুতরাং সার্থক ও সুন্দর জীবনের প্রয়োজনে বিদ্যাকে গ্রন্থের বন্দিশালা হতে মুক্ত করে আত্মস্থ করতে হবে, পরের হাতে রক্ষিত সম্পত্তি নিজের করায়ত্ত করতে হবে। বিদ্যা ও সম্পদ যখন মানুষের যথার্থ প্রয়োজন মিটায় তখনই তার সার্থকতা। কিন্তু মানুষের যথার্থ প্রয়োজনে যদি তা কাজে না লাগানো যায়, তবে সেই বিদ্যা ও অর্থ-সম্পদের কোনো মূল্য নেই।
শেষকথা: গ্রন্থ পাঠ করার মাধ্যমে অর্জিত বিদ্যা এবং উপার্জিত ধন- যা নিজের আয়ত্তে থাকে, তাকেই যথাক্রমে বিদ্যা এবং ধন বলা যায়। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী কাজে লাগানোর জন্য বিদ্যা অর্জন করা এবং ধন-সম্পদ নিজের আয়ত্তে রাখা দরকার।
আরো দেখো: সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ ভাবসম্প্রসারণ
গ্রন্থগত বিদ্যা ভাব সম্প্রসারণ – ক্লাস ৯, ১০ (এসএসসি)
মূলভাব: বিদ্যা আয়ত্ত না করে শুধু গ্রন্থে সংরক্ষণ করলে এবং নিজের অর্থ-সম্পদ পরের হাতে থাকলে তা কোনো কাজে আসে না। অর্থাৎ বইয়ের বিদ্যা যা আত্মস্থ হয়নি এবং নিজের সম্পদ যা নিজের আয়ত্তে আসেনি- প্রয়োজনের সময় এ সম্পদ কোনো কাজে ব্যবহার করা যায় না।
সম্প্রসারিত ভাব: মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। তার বিবেক আছে। মানুষ জ্ঞান অর্জন করে মহৎ গুণাবলির অধিকারী হয়। পরিশ্রম ও বুদ্ধি দিয়ে সে অর্থ উপার্জন করে। জ্ঞান ও অর্থ মানুষের মনুষ্যত্বকে পূর্ণতা দেয়। জ্ঞান অর্জন করতে হলে তাকে পড়াশুনা করতে হয়। গ্রন্থ বা বই জ্ঞানের ভাণ্ডার। এ গ্রন্থ পাঠ করে মানুষ তার জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করতে পারে । জ্ঞানের ধারক ও বাহক হচ্ছে বই। গ্রন্থে আবদ্ধ মননের সোনালি শস্যের স্বাদ পেতে হলে আমাদেরকে বই পড়তেই হবে। কিন্তু বই হৃদয়ঙ্গম না করে কেবল প্রচুর বই সংগ্রহে রাখলেই তাকে জ্ঞানী বলা যায় না। কারণ ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় জীবনের প্রয়োজন দেখা দিলে গ্রন্থগত সে বিদ্যা কোনো কাজেই আসে না। কেবল মুখস্থ করে পরীক্ষা পাস করলেই প্রকৃত শিক্ষিত হতে পারে না। যদি গ্রন্থের আদর্শকে আত্মস্থ করা না যায়, গুলোর তাহলে তা জীবনের কোনো উপকারেই আসে না। বিদ্যার পোশাকিরূপে দেহশোভিত করলেই যথার্থ বিদ্বান হওয়া যায় না। যেমন নিজের ধন অন্যের কাছে থাকলে প্রয়োজনের সময় উপকারে আসে না। বিদ্যা ও ধন মানুষের অতি প্রয়োজনীয় জিনিস। তাদের কাজে লাগাতে হলে বিদ্যাকে করতে হয় আত্মস্থ আর ধনকে রাখতে হয় নিজের আয়ত্তে। সেজন্যেই বলা হয়েছে, পুঁথিগত বিদ্যা যেমন নিষ্প্রয়োজন, তেমনি পর হস্তে ধনও নিরর্থক।
উপসংহার: বই জ্ঞান অর্জনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম এটি যেমন সত্য, তেমনি এও সত্য বই থেকে আহরিত জ্ঞানকে কাজে লাগাতে ব্যবহারিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হয় এবং ধনসম্পদ নিষ্ঠার সঙ্গে আপন আয়ত্তে আনতে হয়। তাহলেই তা উপকারে আসে।
গ্রন্থগত বিদ্যা ভাব সম্প্রসারণ – এইচএসসি
ভাবসম্প্রসারণ: পুঁথিগত বিদ্যা এবং পরের হাতের ধন বা অর্থকড়ি প্রয়োজনের সময় জগত ও জীবনের কোন কাজে লাগানো যায় না। প্রয়োজনে যদি কোনকিছু কাজে না লাগানো গেল, তবে তা থাকা আর না থাকা সমান কথা। পুঁথিগত বিদ্যা যা আত্মস্থ করা হয়নি এবং অন্যের হাতের ধন যা স্বীয় করায়ত্ত হয়নি- এ সবই নিরর্থক। বিদ্যা এবং ধনের সার্থকতা নির্ভর করে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর ওপর। পার্থিব জীবনে ধন-সম্পদ ও বিদ্যার গুরুত্ব অপরিসীম। গ্রন্থ বা বইপুস্তক পাঠের মাধ্যমে আমরা সাধারণত বিদ্যার্জন তথা জ্ঞানলাভ করে থাকি। কিন্তু শুধু পুঁথিগত জ্ঞানলাভ করলে শিক্ষা অর্জন হয়না। বই-এর সঞ্চিত বিদ্যা মানুষ চর্চার মাধ্যমে আত্মস্থ করে এবং মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়। সেই গ্রন্থগত বিদ্যা যদি আমরা আমাদের ব্যবহারিক জীবনে যথার্থ কাজে লাগাতে না পারি, তাহলে সে বিদ্যা বা জ্ঞান মূলত মূল্যহীন।
বিবেকবোধের কারণে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষ জ্ঞান অর্জনের মধ্য দিয়ে মহৎ গুণাবলীর অধিকারী হতে পারে। সেই জ্ঞানের বলে পরিশ্রম ও বুদ্ধি দিয়ে অর্থ উপার্জন করে। উপার্জিত জ্ঞান ও অর্থ মানুষকে মনুষ্যত্বসম্পন্ন করে তোলে । আবার জ্ঞান অর্জনের জন্য মানুষকে বই পাঠ করতে হয়। কারণ পৃথিবীর অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের আভাসও এই বই-এর মধ্যে আছে। তাই বই-এর মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করে নিজের বিবেককে শান্ত করতে হবে। বিদ্যা বা জ্ঞান মানুষকে কল্পনাজগতে নিয়ে যায় এবং চেতনাকে সমৃদ্ধ করে। কিন্তু গুটিকয়েক বই পড়ে কিংবা বই ক্রয় করে ঘরে ফেলে রেখে সেই বিদ্যা বা জ্ঞান অর্জিত হয় না। বিদ্যা অর্জনের মাধ্যমে মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়ে জীবনকে সার্থক করে তুলতে হবে। জীবনাচরণের মধ্য দিয়েই লব্ধ জ্ঞানকে পূর্ণতা দেওয়ার মাঝেই বিদ্যার সার্থকতা। মানবজীবনে ধনের প্রয়োজনও অধিক । তাই মানুষ কষ্ট করে ধন অর্জন করে, প্রয়োজনের সময় সে ধন কাজে লাগায়। কিন্তু অর্জিত ধন যদি পরের কাছে গচ্ছিত রাখা হয় তাহলে প্রয়োজনে তা পাওয়া যাবে না। অর্জিত ধন পরের কাছে রাখলে তা নষ্ট হতে বাধ্য ।
শেষে বলা যায় অপরের অধিকৃত সম্পদে যেমন আমাদের অধিকার নেই, কারণ প্রয়োজনে আমরা তা কাজে লাগাতে পারি না। তেমনি অর্জিত বিদ্যা বা জ্ঞানকে যদি প্রাত্যহিক জীবনে কাজে লাগানো না যায় তাহলে আমাদের সে বিদ্যাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। গ্রন্থগত বিদ্যা এবং পরহস্তে ধন জীবনের প্রয়োজনের সময় যদি কাজে না লাগে তা হলে প্রকৃতপক্ষে বিদ্যা বা ধন নয়। তাই এ বিদ্যা এবং ধনকে মানুষের নিজস্ব সম্পদ হিসেবে অর্জন করতে হবে। তাই পুঁথিগত বিদ্যা যেমন নিষ্ফল, পরহস্তে ধন রাখাও তেমনি নিরর্থক।
আজকের এই ৫টি নমুনা থেকে যেকোন একটি শিখলেই তুমি পরীক্ষায় ভাল করতে পারবে। আশা করি তোমাদের অনেক বেশি পছন্দ হয়েছে। পছন্দ হলে বন্ধু ও শুভাকাংখীদের সাথে শেয়ার করতে পারো।




