কীর্তিমানের মৃত্যু নেই ভাবসম্প্রসারণ – ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, এসএসসি ও এইচএসসিঃ সুপ্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আজকে তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি কীর্তিমানের মৃত্যু নেই ভাবসম্প্রসারণ। এটি আমরা মোট ৩টি নমুনার মাধ্যমে ছবিসহ উপস্থাপণ করেছি, যা হাই স্কুল ও কলেজ এর সকল শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উপযোগী। তাহলে তুমি যদি এই ভাবসম্প্রসারণটি খুজে থাক, এখনি তোমার ক্লাস অনুযায়ী শিখে ফেল।
| পোস্টের বিষয়বস্তু | ভাবসম্প্রসারণ |
| ভাবসম্প্রসারণ টপিক | কীর্তিমানের মৃত্যু নেই |
| প্রযোজ্য শ্রেণি | ক্লাস ৬,৭,৮,৯, এসএসসি, এইচএসসি |
| নমুনা আছে | ৩টি (ছবিসহ) |
কীর্তিমানের মৃত্যু নেই ভাবসম্প্রসারণ – ক্লাস ৬, ৭, ৮
ভাব-সম্প্রসারণঃ দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য যারা অবদান রাখেন তারাই প্রকৃত কীর্তিমান। তারা দেশ, জাতি ও মানবসমাজের আদর্শ। তাদের মৃত্যু নেই, তারা অমর।
পৃথিবীতে মানুষের জীবনের আয়ু সীমিত কিন্তু স্বপ্ন অসীম। অসীম স্বপ্নকে কীর্তিমান মানুষই পারেন বছরের স্বল্প আয়ুকে দিতে। অর্থাৎ স্বল্প আয়ুর জীবনে মহৎ কাজের মাধ্যমে অক্ষয়-অমর কীর্তি দিয়েই চেয়া় যায় অসীম অমরত্বকে। যুগ যুগ ধরে মানবসমাজ উপকৃত হয় কীর্তিমানদের কাজে। যথার্থ কীর্তিমানদের মহান কীর্তি পৃথিবীতে অক্ষয় হয়ে থাকে। এই জাতীয় কীর্তিমান মানুষ দেশ, জাতি, সমাজ ও বিশ্বকে আলোর পথ দেখায়, ভালোর দিশা দেয়। দৈহিক মৃত্যু তাদের কীর্তিকে লোপ করতে অসম্ভব। বরং তাদের উজ্জ্বল স্মৃতি বেড়ে থেকে পৃথিবীকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়। রবীন্দ্র, নজরুল, শেলি, কিটস প্রমুখ কীর্তিমান মানুষ আজও পৃথিবীর মানুষকে আলোকিত করেছে। ভালো কাজের ফল যেমন অক্ষয় তেমনি ভালো কাজের কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব বেড়ে থাকেন যুগ যুগ ধরে।
কর্মগুণেই মানুষ বেঁচে থাকে মানুষের হৃদয়ে, ইতিহাসের পাতায়। মহৎ কর্মই মানুষকে অমরত্ব দেয়। মানবজীবনের সাফল্যের চাবিকাঠি হলো কর্ম ও কীর্তি। তাই কীর্তিমানদের মৃত্যু নেই।
কীর্তিমানের মৃত্যু নেই ভাবসম্প্রসারণ – এসএসসি
মূলভাবঃ মানুষ মরণশীল হলেও কর্মগুণে অমরত্ব লাভ করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে বয়সটা বড় কথা নয়, কীর্তিমান হওয়াটাই বড় কথা। সংকীর্ণ মানবজীবনকে অনন্তকাল বাঁচিয়ে রাখতে হলে তথা স্মরণীয়-বরণীয় করে রাখতে হলে কল্যাণকর কর্মের কোনো বিকল্প নেই।
ভাব-সম্প্রসারণঃ মৃত্যু অনিবার্য, এটি চিরন্তন সত্য। তবে মানুষ তার সৎকর্মের মাধ্যমে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারে। যেসব যাঁরা কীর্তিমান তারা সেবামূলক কাজের মাধ্যমে মানবসমাজে বেঁচে থাকেন যুগ যুগ ধরে। এ নশ্বর পৃথিবীতে সবকিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ কোনো মানুষই পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারে না। সেক্ষেত্রে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার বড় কথা নয়, কারণ এতে তার অমরত্ব আসে না। মানুষ অমরত্ব লাভ করে তার কর্মের মাধ্যমে। কর্মই তাকে বাঁচিয়ে রাখে সাধারণ মানুষের অন্তরে চিরদিন। অর্থাৎ যেসব মানুষ নিঃস্বার্থভাবে পরোপকারে আত্মনিয়োগ করেন, মানুষের কল্যাণে নিজেদেরকে বিলিয়ে দেন – মৃত্যুর পরেও তারা অমর হয়ে থাকেন মানুষের প্রকৃতপক্ষে তারা অমর। সর্বদাই তারা মানবের অন্তরে বিরাজ করেন। মানুষ তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে এবং তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেদেরকে প্রতিস্থাপন করতে চায়। কীর্তিমান ব্যক্তিত্বের জীবনদর্শন যুগ যুগ ধরে মানুষের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকে।
উপসংহারঃ সক্রেটিস, প্লেটো, গ্যালিলিও প্রমুখের মতো যেসব কীর্তিমান ব্যক্তি মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করে মৃত্যুবরণ করেছেন তারা অমর। আবার সুকান্ত ভট্টাচার্যের মতো মাত্র একুশ বছর বয়সে অকালমৃত্যুবরণ করিতেও সাহিত্যকীর্তিতে অমর হয়ে আছেন। তাই বলা হয়েছে যে, মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়।
আরো দেখুনঃ ভাবসম্প্রসারণ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত
ভাবসম্প্রসারণ কীর্তিমানের মৃত্যু নেই – এইচএসসি
মূলভাবঃ বিশ্ব-ব্রক্ষান্ডের অনন্ত সময়ে সংক্ষিপ্ত জীবন নিয়ে মানুষ তার মহৎকর্মের মধ্য দিয়ে এ পৃথিবীতে স্মরণীয় বরণীয় হয়ে থাকে। আবার এই সংক্ষিপ্ত জীবনেই অসৎকর্মের জন্য মানুষ বেঁচে থেকেও মরার মত অজ্ঞাত থেকে যায়। কেননা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তাকে ভালবাসেনা, দেশ ও জাতি তাকে শ্রদ্ধা করে না, স্মরণ করে না, এমন কি মরলেও কারও তাতে আসে-যায় না কিছু।
সম্প্রসারিত ভাবঃ জন্ম-মৃত্যুর অমোঘ বিধানে মানুষ বাঁধা। কারণ জন্ম নিলে মানুষ কেন, যে কোন প্রাণীরই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয় । চিরন্তন এই সত্য মেনে নিয়েই পৃথিবীতে প্রাণীকূলের বিচরণ। মানুষও এর থেকে ব্যতিক্রম নয়। মৃত্যুর মধ্য দিয়েই আমাদেরকে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিতে হয়। বিদায় নিলেও পেছনে পড়ে থাকে আমাদের কর্মফল- সে কর্মফল মহৎ হতে পারে আবার অপকর্মও হতে পারে। তবে যাদের কর্মফল মহৎ তারা সেই কর্মের জন্য মরে যাওয়ার পরও পৃথিবীতে যুগ যুগ বেঁচে থাকে। মানুষের জীবনকে দীর্ঘ সময়ের সীমারেখা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। তবে জীবনে কেউ যদি কোনপ্রকার ভাল কাজ না করে তবে সে জীবন অর্থহীন, নিষ্ফল ছাড়া আর কিছু না । এই নিষ্ফল জীবনের অধিকারী মানুষটিকে কেউ মনেও রাখে না বা রাখার প্রয়োজন হয় না। নীরব জীবন নীরবেই ঝরে যায়। অর্থাৎ জ্যান্ত মরা থেকে প্রকৃতপক্ষে মৃত্যু ঘটে তার জীবনে ।
পক্ষান্তরে, যে মানুষ জীবনকে কর্মমুখর করে রাখে এবং যার কাজের মাধ্যমে জগৎ ও জীবনের উপকার কীর্তিত সাধিত হয় তাকে বিশ্বের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। সার্থক মানুষের কাজের অবদান বিশ্বের বুকে হয়ে কীর্তিলোকের গৌরব প্রচারিত হতে থাকে। কীর্তিমানের যেমন মৃত্যু নেই তেমনি শেষও নেই। কারণ পৃথিবীতে নিজস্ব কীর্তির মহিমায় সে লাভ করে অমরত্ব। কীর্তিমানের মৃত্যু হলে তাঁর দেহের ধ্বংসসাধন হয় বটে, কিন্তু তাঁর সৎ কাজ এবং অম্লান কীর্তি পৃথিবীর মানুষের কাছে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে তাঁর মৃত্যুর শতবছর পরেও মানুষ তাঁকে স্মরণ করে এবং মানব সমাজে বাঁচিয়ে রাখে।
উপসংহারঃ অতএব, সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা কর্ম-সাফল্যের ওপর নির্ভরশীল। কারণ সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটে দুইবার। মরার মত বেঁচে থাকা এবং সত্যিকার মারা যাওয়া। আর যাঁরা অসাধারণ কীর্তিমান তাঁদের মৃত্যু কোনদিনও ঘটে না, শুধু দেহগত লোকান্তর ঘটে।
এই ছিল আজকে আমাদের কীর্তিমানের মৃত্যু নেই ভাবসম্প্রসারণ এর তিনটি নমুনা। আশা করি তোমাদের শিখতে কোন সমস্যা হবে না, কোন প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্টে জানাতে ভুলবে না।




