ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি বা পত্র

ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি ক্লাস ৬,৭,৮,৯, এসএসসি, এইচএসসি: আজকে আমরা শিখবো তোমার দেখা ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তোমার কোন প্রিয় বন্ধুকে একটি পত্র বা চিঠি কিভাবে লিখবে। আমরা মোটামুটি ৪টি সুন্দর স্যাম্পল যত্ন সহকারে লিখেছি, যা তোমাদের সকল শ্রেণির জন্যই যথেষ্ঠ। তাহলে এখনি বসে যাও পড়ার টেবিলে আর শিখে নাও গুরুত্বপূর্ণ এই পত্রটি।

পোস্টের বিষয়বস্তুপত্রলিখন
আজকের পত্রের টপিকঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি
প্রযোজ্য শ্রেণিসমূহক্লাস ৬,৭,৮,৯, এসএসসি, এইচএসসি
নমুনা আছে৪টি (২টি ছবিসহ)

ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি

মিরপুর, ঢাকা।
২৫শে জুলাই ২০২৫

সুপ্রিয় সালেহ,
আমার প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিও। আশা করি, তুমি ভালো আছ। আমিও পরম করুণাময়ের অশেষ রহমতে ভালো আছি। আমি কিছুদিন আগে একটি ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণে গিয়েছিলাম। আজ তোমাকে ওই স্থান সম্পর্কে সংক্ষেপে জানাচ্ছি।

তুমি তো জানো, এ পর্যন্ত আমি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানগুলোর অধিকাংশই ভ্রমণ করেছি। সম্প্রতি আমি নাটোরে ভ্রমণে গিয়েছিলাম। সেখানে রানি ভবানীর বাড়ি, দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি ও চলনবিল দেখেছি। রানি ভবানী ছিলেন প্রজাহিতৈষী নারী তিনি শিক্ষা বিস্তারেও আগ্রহী ছিলেন। শত শত মন্দির, অতিথিশালা ও রাস্তা নির্মাণ করে তিনি মানবমনে স্থায়ী আসন গড়েছেন । রানি ভবানীর বাড়ি দেখার পর গেলাম দিঘাপতিয়া রাজবাড়িতে । এটি প্রায় ৪৩ একর জমির ওপর নির্মিত। রাজবাড়ির প্রবেশপথে একটি সিংহদ্বার রয়েছে। মূল ভবনের ভিতরের সাজসজ্জা ও আসবাবপত্র খুবই বিস্ময়কর। ভবনের পেছনে একটি বাগান রয়েছে । বাগানটিতে অনেক দুষ্প্রাপ্য গাছ আছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিঘাপতিয়া রাজবাড়িকে উত্তরা গণভবন নামে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন । এরপর গেলাম চলনবিলে । বর্ষাকালে চলনবিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেকগুণ বেড়ে যায়। আমি সঙ্গে থাকা লাইফ জ্যাকেট পরে নৌকায় চড়ে কয়েক ঘণ্টা যাবৎ বিলে ঘুরে বেড়ালাম । নাটোর থেকে আসার সময় সেখানকার বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা নিয়ে এসেছি।

আজ আর নয়। তুমি কোথাও ভ্রমণে গিয়েছ কি না জানিও। বড়োদের শ্রদ্ধা ও ছোটোদের স্নেহ দিও।

ইতি তোমার বন্ধু-
জামাল আকন্দ

[পত্র লেখা শেষে খাম এঁকে খামের ওপরে ঠিকানা লিখতে হয়।

ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে পত্র

গোয়াল চামট, ফরিদপুর
২০-১২-২০২৬ ইং

প্রিয় শিশির,
অজস্র প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি। আশাকরি ভালো আছো। বার্ষিক পরীক্ষার পড়াশোনা নিয়ে খুবই ব্যস্ত ছিলাম । তাই অনেকদিন তোমাকে কোন চিঠি লেখা হয়নি
বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে, পরদিন সকালে একই ক্লাশের কয়েকজন বন্ধু বের হলাম। ফরিদপুর শহর থেকে পরিবহনের একটি বাসে চড়লাম । পরীক্ষা শেষ হয়েছে, মাথার উপরে কোন চাপ নেই । মনটা বেশ আনন্দে ভরা। ঢাকা জেলার সাভারের নিকটবর্তী নবীনগর নামক স্থানে আমরা বাস থেকে নেমে পড়লাম। পাশেই জাতীয় স্মৃতিসৌধের এলাকা। গেট দিয়ে আমরা ভেতরে প্রবেশ করলাম । স্মৃতিসৌধকে মনে হলো ফুলের পাপড়িবেষ্টিত একটি সুউচ্চ স্তম্ভ। তারই পাদদেশে স্বচ্ছ একটি জলাধার। তার মধ্যে দুলছে শাপলা ফুলের গুচ্ছ। জাতীয় স্মৃতিসৌধের অপরূপ শোভা বর্ধিত করেছে জাতীয় ফুল শাপলার স্নিগ্ধ হাসির বন্যা।

স্মৃতিসৌধ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের প্রতীক। এর সাতটি পাপড়ি ১৯৪৮, ৫২, ৫৪, ৫৮, ৬৬, ৬৯ এবং ৭১ সালের নিরব ঐতিহাসিক সাক্ষী। এখানে এলেই মনে হয় ‘ইতিহাস কথা কয়’। কয় শুধু বাঙালি জাতির আনন্দ বেদনা ও বিজয়ের কথা।

এর চেয়ে বেশি কোন বর্ণনা দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি তোমাকে বলব, সুযোগ পেলে জাতীয় স্মৃতিসৌধ একবার দেখে নিও। এখানে শেষ করব। তুমি কেমন আছ। আমি ভালো আছি। বাসায় বড়দের সালাম ও ছোটদের জন্য দোয়া রইলো।

ইতি-
কনক চাপা

আরো পড়তে পারোঃ বন্ধুর মায়ের/বাবার মৃত্যুতে সান্তনা দিয়ে বন্ধুকে পত্র

ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের বর্ণনা দিয়ে বন্ধুকে চিঠি বা পত্র

শেওড়াপাড়া, ঢাকা
১৪/০৪/২০২৫ ইং

প্রিয় শ্যামল,
শুভেচ্ছা নিও। গত চিঠিতে তোমাকে লিখেছিলাম শরৎকালীন ছুটিতে ভাই-ভাবীর সাথে বেড়াতে যাব। কিন্তু বেড়ানোর জায়গাটি যে এত চমৎকার হবে তা কখনো ভাবতে পারিনি।
গতকাল আমরা ইতিহাস প্রসিদ্ধ সোনারগাঁও দেখে এসেছি। ছোটোবেলায় বইতে পড়েছি বাংলার প্রখ্যাত বারোভূঁইয়ার কাহিনি। তাঁদের একজন হচ্ছেন স্বনামধন্য, স্বাধীনচেতা বীর ঈশা খাঁ। তাঁরই অমর কীর্তি রাজধানী সোনারগাঁও। এর প্রাকৃতিক শোভা প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শনের বিমোহিত ভাবমূর্তি চিঠিতে লিখে তোমাকে আমি ঠিক বুঝাতে পারব কি না জানি না। তবুও কিছুটা হলেও তুলে ধরতে চেষ্টা করব।

সকাল সাতটায় খাওয়াদাওয়া সেরে আমরা সোনারগাঁও-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। নয়টায় ছায়াঢাকা, পাখির কূজনে মুখরিত সোনারগাঁও-এ পৌঁছলাম। রাস্তার পাশে বিরাট ভগ্নপ্রায় দ্বিতল ইমারত। সামনে মস্ত পুকুরের পাশে গাছের সারি। শানবাঁধানো ঘাটে ঘোড়ার পীঠে বীর যোদ্ধার পাথরের খোদাই গর্বিত প্রতিমূর্তি স্মরণ করিয়ে দেয় বাংলার অবলুপ্ত শৌর্য-বীর্যের কথা। পুকুরের স্বচ্ছ জল। চাঁদনি রাতে টলটলে জলের পুকুরঘাটে হয়তো এসে বসতেন প্রকৃতির রূপপিয়াসী কত না নরনারী। আজ এ ঘাট ধসে পড়ার পথে। আর একটু এগিয়ে যেতেই দেখলাম শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের প্রচেষ্টায় স্থাপিত বাংলার লোকশিল্প ও কারুশিল্প জাদুঘর। এখান থেকে শুরু ঈশা খাঁর রাজধানীর মূল ভবন। রাস্তার দুপাশে অনেক অট্টালিকা। প্রতিটি অট্টালিকায় রয়েছে প্রাচীন যুগের স্থাপত্য নিদর্শন । অট্টালিকাগুলো ছোটো ছোটো ইট দিয়ে তৈরি।

সপ্তদশ শতকের সোনারগাঁও ছিল চারদিকে জলবেষ্টিত। বর্তমানে মূল শহরের পেছন দিক দিয়ে ক্ষীণকায় একটি স্রোতধারা তারই সাক্ষ্য বহন করছে। শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ঈশা খাঁ বেছে নিয়েছিলেন রাজধানী হিসেবে সোনারগাঁওকে। বাংলাদেশ সরকার পুরাকীর্তি সংরক্ষণ বিভাগের অধীনে সোনারগাঁও-এর ধ্বংসপ্রায় প্রাসাদসমূহকে সংস্কার ও সংরক্ষণের আওতায় এনেছেন। উত্থানপতনের ধারা বেয়ে আজকের ধ্বংসপ্রায় সোনারগাঁও হয়তো একদিন বিলীন হয়ে যাবে; কিন্তু সোনারগাঁও-এর স্মৃতি আমার মানসপটে চিরদিনই থাকবে অমলিন। তুমিও সময় পেলে দেখে এসো আজকের বিবর্ণ দালানকোঠা, চুন- সুরকির পলেস্তারা খসে যাওয়া ইতিহাসের জ্বলন্ত নিদর্শন সোনারগাঁওকে।

আমি ভালো আছি। তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে জানাবে। তোমার বাবা-মাকে আমার সালাম জানাবে।

ইতি-
শামীম আহমেদ

[নোট: পত্রের শেষে ঠিকানাসংবলিত (বামে প্রেরক, ডানদিকে প্রাপক ও তার একটু ওপরে ডাকটিকেট) খাম এঁকে দেওয়া অত্যাবশ্যক]

ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি

২৫-০৩-২০২৬ইং
২৭, লালবাগ রোড, ঢাকা

সুপ্রিয় রতন,
প্রথমে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা নিও। আশা করি ভালো আছ। আমি স্কুলের ছুটির অবসরে বর্তমানে ঢাকায় বড় আপার বাসায় অবস্থান করছি। এখানে এসেই অপ্রত্যাশিতভাবে একটি ঐতিহাসিক স্থান ‘লালবাগ দুর্গ’ দেখার .সৌভাগ্য হলো। সে সম্পর্কে তোমাকে কিছু জানানোর লোভ সংবরণ করতে পারলাম না, তাই লিখছি।

তিনশ বছরের পুরনো স্মৃতি বিজড়িত লালবাগ দুর্গ মুঘল স্থাপত্যশিল্পের এক অনুপম নিদর্শন। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে পূর্ব-পশ্চিমে ১২০০ ফুট ও উত্তর-দক্ষিণে ৮০০ ফুট বিস্তৃত প্রাচীর ঘেরা মূল দুর্গ। বর্তমানে দুর্গটি বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত। আমরা যথারীতি প্রবেশ মূল্য পরিশোধ করে দুর্গের ভেতরে প্রবেশ করলাম। দুর্গের অভ্যন্তরে ঘুরে-ফিরে দেখলাম সতেরো শতকে নির্মিত মুঘল স্মৃতি বিজড়িত দরবার হল, পরিবিবির স্মৃতিসৌধ, হাম্মামখানা, পুকুর, মসজিদ, ফোয়ারা, নর্দমা ইত্যাদি। এছাড়া দেখলাম বিভিন্ন আকৃতির অসংখ্য ছোটখাটো কুঠুরির ধ্বংসাবশেষ।

দরবার হলটি বর্তমানে মুঘল আমলের প্রাচীন কীর্তিসমূহের জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে মুঘল আমলের অনেক নিদর্শন দেখলাম। যেমন- বন্দুক, পিস্তল, তীর-ধনুক, বর্শা, বল্লম, হাত-কুঠার, তরবারি, ঢাল, শিরোস্ত্রাণ ইত্যাদি। আর দেখলাম মুঘল আমলের মুদ্রা, মুঘল বাদশাহদের জারিকৃত ফরমান, হস্তলিপি, পাণ্ডুলিপি, শিলালিপি, চিত্রশোভিত মৃৎপাত্র, তৈজসপত্র, কার্পেট, চিত্রকর্ম ইত্যাদি। দুর্গের বিশাল উন্মুক্ত চত্বরটি ফুল ও ফল বাগানে সুশোভিত।

লালবাগ দুর্গ শুধু মুঘল স্মৃতির ধারক ও বাহক নয়; এ দুর্গের সাথে জড়িয়ে আছে ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের নিবেদিতপ্রাণ অসংখ্য সূর্য-সন্তানের কথা। এ দুর্গটি দেশের প্রাচীন স্থাপত্যকীর্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং অতীত ইতিহাসের এক উজ্জ্বল স্বাক্ষর। দুর্গটি দেখে শুধু উপলব্ধি করা যায়, ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আজ এ পর্যন্তই। ভালো থেকো।

ইতি-
তোমারই আবুল

[বিশেষ দ্রষ্টব্য: পত্রের শেষে ডাকটিকেট সংবলিত খাম ও ঠিকানা ব্যবহার অপরিহার্য]

লেখা তো হল, এখন তোমাদের ক্ষেত্রে কিছু কথা হচ্ছে- পত্র শেষে সুন্দর করে ডাকটিকেট সম্বলিত একটি টেবিল আঁকতে হবে, যা আবশ্যক। তা না হলে পরিক্ষায় নম্বর কম পাবে। যদি আঁকতে না পারো আমাকে কমেন্ট করে জানাবে আমি শিখিয়ে দিব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top