ভাবসম্প্রসারণ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত – ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, এসএসসি ও এইচএসসিঃ হ্যালো শিখতে আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীরা, তুমি যদি “সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত” ভাবসম্প্রসারণটি খুজে থাক, তাহলে একদম সঠিক জায়গায় এসেছ। আজকে আমরা এখানে ভাবসম্প্রসারণটির ৪টি নমুনা তোমাদের সাথে শেয়ার করবো, যা তোমরা তোমাদের যেকোন পরীক্ষায় লিখতে পারবে। চল তাহলে শুরু করা যাক-
| পোস্টের বিষয়বস্তু | ভাবসম্প্রসারণ লিখন |
| ভাবসম্প্রসারণ টপিক | সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত |
| প্রযোজ্য শ্রেণিসমূহ | ক্লাস ৬,৭,৮,৯, এসএসসি, এইচএসসি |
| নমুনা আছে | ৪টি (ছবিসহ) |
ভাবসম্প্রসারণ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত – ক্লাস ৬, ৭
মূল-ভাবঃ শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। সুশিক্ষা মানুষকে মননশীল, শিক্ষিত এবং আলোকিত করে তোলে। আর স্বশিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ প্রকৃত সুশিক্ষা লাভ করে।
সম্প্রসারিত ভাবঃ জাতিকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দেয় শিক্ষা। শিক্ষার আলো ছাড়া ব্যক্তি-সমাজ-জাতির উন্নতি-অগ্রগতি অসম্ভব। মেধা ও পরিশ্রম দ্বারা শিক্ষার্থীরা শিক্ষিত হতে পারে। এখানে শিক্ষকের ভূমিকা সাহায্য করা, দিকনির্দেশনা দেওয়া। এটাও সীমিত পর্যায় পর্যন্ত সচল থাকে। তারপর পুরো দায়িত্ব-কর্তব্য এসে যায় শিক্ষার্থীর ওপর— যা সুশিক্ষিত হয়ে ওঠার নামান্তর। ভালো পাসের পর সার্টিফিকেট অর্জনই প্রকৃত শিক্ষা নয়। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে অনেক সময় জ্ঞানের পূর্ণতা আসে না। সত্যিকারের জ্ঞানের জন্য প্রয়োজন আত্মপ্রয়াস। তার জন্য চাই পরিশ্রম ও একান্ত সাধনা। স্বীয় চেষ্টায় একাগ্র সাধনায় মানুষ শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যেতে পারে। মূলত এভাবেই মানুষ স্বশিক্ষিত হয়ে ওঠে।
শেষ কথাঃ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও শিক্ষক পথ দেখান মাত্র। সুশিক্ষিত হতে হয় ব্যক্তির একান্ত সাধনায়। সুশিক্ষিত মানুষের মন কুসংস্কারমুক্ত হয়। তারা পরিশীলিত রুচির, উদার মনোভাবের বিনয়ী মানুষ। মুক্তবুদ্ধির আলোয় তারা অর্জন করেন সাফল্য গৌরব।
ভাবসম্প্রসারণ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত – ক্লাস ৮
ভাব-সম্প্রসারণ : শিক্ষা তখন সুশিক্ষা হয় যখন সেই শিক্ষা মানব উন্নয়নে, জাতির শুভকর্মে ভূমিকা রাখে। আর সুশিক্ষিত হওয়ার একমাত্র উপায় নিজের চেষ্টায় শিক্ষা অর্জন অর্থাৎ স্বশিক্ষা অর্জন।
জ্ঞান সীমাহীন। জ্ঞান শিক্ষার বিষয় নয়, অর্জনের বিষয়। পৃথিবীর সর্বত্রই রয়েছে জ্ঞানের উপাদান, শিক্ষার্থীকে তা অর্জন করতে হয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সামান্য বইপুস্তক মুখস্থ করে সনদ পাওয়ার মাধ্যমে যতটুকু শিক্ষা হয় ততটুকু। কিন্তু তাতে প্রকৃত শিক্ষা হয় না। প্রকৃত শিক্ষার ক্ষেত্র পুথিগত নয়- তা উপলব্ধিজাত। শিক্ষার বিবিধ প্রাকৃতিক উপাদান যখন নিজের প্রজ্ঞা সহযোগে আত্মস্থ করা যায়, তখনই সে হয়ে ওঠে স্বশিক্ষিত। স্বশিক্ষিত যে সে-ই মূলত স্বশিক্ষিত। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুরু উত্তর সাধক মাত্র, গুরু কেবল পথ দেখাতে পারেন, গুরুর দেখানো পথে নিজের মতো করে শিক্ষার বিষয়কে আত্মস্থ করা, উপলব্ধিতে আনাই স্বশিক্ষার লক্ষণ। আর এ শিক্ষা কোনো প্রতিষ্ঠান দিতে পারে না।
যে শিক্ষা মানুষকে, তার আত্মাকে বিকশিত করে, সে শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। যারা প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে তারাই সুশিক্ষিত। পৃথিবীতে অনেক সুশিক্ষিত লোক আছেন- যারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত নন, কিন্তু স্বশিক্ষিত ও স্বশিক্ষিত। স্বশিক্ষিত মানুষ তার অধ্যবসায় দিয়ে ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জ্ঞানকে লালন করে হয়ে ওঠে স্বশিক্ষিত। জীবনকে উপলব্ধি করতে শেখে। আর এ শিক্ষা অর্জন করা যায় নিজের চেষ্টায়। ফলে স্বশিক্ষিত না হলে সুশিক্ষিত হওয়া যায় না। সুশিক্ষিত মানুষ মাত্রই স্বশিক্ষিত।
আরো দেখুনঃ কীর্তিমানের মৃত্যু নেই ভাবসম্প্রসারণ
সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত ভাবসম্প্রসারণ – এসএসসি
মূলভাবঃ শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে সুশিক্ষিত হওয়া যায় না। জীবনের বাস্তবতায় মনের তাগিদে অর্জিত জ্ঞানের বিকাশ দ্বারা প্রকৃত শিক্ষিত হওয়া সম্ভব।
সম্প্রসারিত ভাবঃ শিক্ষা জীবনের জন্য একটি অপরিহার্য বিষয়। জগৎ ও জীবনকে বাস্তব স্বরূপে চেনা-জানার জন্য এবং সর্বোপরি মানবিক মানুষ হিসেবে মূল্যবোধ অর্জনের জন্য শিক্ষা প্রয়োজন। অন্তরকে বিকশিত করাই এর উদ্দেশ্য। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ মানবিক মানুষ হিসেবে মূল্যবোধ অর্জনের জন্য শিক্ষা প্রয়োজন। কিন্তু শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দ্বারা তা সম্ভব নয়, অর্জনের অভ্যস্ত হয় এবং নিজেকে জগৎ ও জীবনের উপযোগী করে তোলে। কিন্তু শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দ্বারা তা সম্ভব নয়।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন আছে বটে, কিন্তু এর পরিসর সীমিত। মানুষ প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে প্রয়োজনের তাগিদে নয়; অন্তরের প্রেরণায়। ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা’ থেকে নিজের চেষ্টা, সাধনা ও অভিজ্ঞতা দ্বারা এ শিক্ষা অর্জিত হয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানুষের মনের উপর প্রতি আকৃষ্ট করে উপার্জনমুখী করে। ফলে মানুষ খেয়ে-পরে বাঁচার জন্য এ শিক্ষা অর্জনে বাধ্য হয়। এতে উপার্জনের পথ সুগম হলেও মানুষের আচরণের পরিবর্তন খুব একটা হয় না।
তাই প্রায়শ দেখা যায়, বড়ো বড়ো ডিগ্রিধারী ব্যক্তি জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও মূর্খের মতো আচরণ করেন। আমাদের সমাজে এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁদের উচ্চতর ডিগ্রি আছে, কিন্তু দেশ ও জাতির কল্যাণে তাঁরা কোনো অবদান রাখতে পারেননি। তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁদের সুশিক্ষিত করতে পারেনি। ফলে জীর্ণ লোকাচার ও অন্ধ কুসংস্কারের দেয়াল ডিঙানো তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাঁরা এই আধুনিক যুগের মানুষ হয়েও প্রগতির চিন্তার ধারক হতে পারেননি। এটি তাদের স্বশিক্ষার অভাবের ফল।
আবার এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, যাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চ ডিগ্রি অর্জন না করেও সংস্কারমুক্ত জীবনের অধিকারী হয়েছেন। তাঁরা নিজের চেষ্টায় শিক্ষালাভ করে জগৎ ও জীবনকে আলোকিত করে জগদ্বিখ্যাত হয়েছেন। অ্যারিস্টটল, সক্রেটিস, প্লেটো, নিউটন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল প্রমুখ ছিলেন স্বশিক্ষিত। তাঁরা জগৎ ও জীবন থেকে নিজের চেষ্টায় জ্ঞানার্জন করে স্বশিক্ষিত হয়েছিলেন। তাই তাঁরা মরেও অমর। তাঁদের কীর্তিগাথা আজও মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে।
উপসংহারঃ নিজের চেষ্টায় অর্জিত শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। ‘স্বশিক্ষিত লোকের জ্ঞানের আলোই মানবজাতিকে আলোকিত জীবন ও উন্নয়নের সন্ধান দিতে পারে।
ভাবসম্প্রসারণ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত – এইচএসসি
মূলভাবঃ শিক্ষার পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হতে হলে মানুষকে নিজস্ব প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সুশিক্ষিত হওয়ার জন্য স্বশিক্ষা বা নিজে নিজে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল জ্ঞানার্জন অর্জন করা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই একজন ব্যক্তির শিক্ষার প্রকৃত মাপকাঠি হতে পারে না। প্রকৃত শিক্ষিত হতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নিজস্ব জ্ঞান অর্জনের চেষ্টাও থাকতে হবে। তবেই শিক্ষা সার্থক হয়ে উঠবে।
সম্প্রসারিত ভাবঃ শিক্ষা সম্পূর্ণরূপে অর্জনসাপেক্ষ। শিক্ষালাভের জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধাপে ধাপে শিক্ষার্থীরা এগিয়ে গিয়ে ডিগ্রী অর্জন করে এবং শিক্ষিত হিসেবে পরিচিত হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সীমাবদ্ধ। নির্দিষ্ট গণ্ডীর ভেতরে থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যদিয়ে জ্ঞানের পূর্ণতা আসে না। জ্ঞানকে আয়ত্ত করার জন্য আত্মপ্রয়াসের কোন বিকল্প নেই। তাই যথেষ্ট জ্ঞানের অনুশীলন ব্যতীত সুশিক্ষিত হওয়া যায় না। আমাদের দেশে বর্তমানে সনদ প্রাপ্তির মধ্যেই শিক্ষা আবদ্ধ হয়ে গেছে। মনে হয় যেন বছরে বছরে সনদ প্রাপ্তি ঘটলেই শিক্ষিত হয়ে গেলাম। দেশে সনদ প্রাপ্তির সংখ্যা বাড়লেও শিক্ষিতের সংখ্যা বাড়ছে না। ফলে অনেকের উচ্চতর ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও তাদের দ্বারা দেশের বা জাতির কোন কল্যাণ সাধিত হচ্ছেনা। কারণ তারা উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করলেও স্বশিক্ষায় সুশিক্ষিত না হওয়ায় তাঁদের মধ্যে মূর্খতার বহিঃপ্রকাশ কখনও ঘটেনি।
পক্ষান্তরে অনেক স্বশিক্ষিত ব্যক্তি আছেন, যাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চতর ডিগ্রি নেই। অথচ তাঁরা দেশ ও জাতি তথা বিশ্বমানবের কল্যাণের জন্য অনেক কিছু করে গেছেন। দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যায়- সক্রেটিস, এরিস্টটল, প্লেটো, নিউটন, গ্যালিলিও, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ সকলেই স্বশিক্ষায় সুশিক্ষিত ছিলেন বলেই আজও অমর হয়ে আছেন জগৎবাসীর কাছে। সুশিক্ষিত মানুষের মন মুক্তবুদ্ধির আলোকে উদ্ভাসিত হয়, তিনি বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হন। পরিশীলিত রুচিবোধে তিনি হন উদার ও বিনয়ী। সব মিলিয়ে স্বশিক্ষিত মানুষ নিঃসন্দেহে হন আলোকিত মানুষ।
উপসংহারঃ জ্ঞানলাভ, আত্মার বিকাশসাধন এবং জীবনকে সুন্দর করার মহৎ বাসনা নিয়ে জ্ঞানের চর্চা করতে হয়। জগতে স্বশিক্ষিত ব্যক্তিরাই নিজের চেষ্টায় জ্ঞানলাভ করেছেন। জগতে তারাই স্বশিক্ষিত যারা প্রকৃত অর্থে আত্মার বিকাশসাধনে শিক্ষাকে গ্রহণ করেন। জ্ঞানরাজ্যে অবাধ বিচরণ ছাড়া সুশিক্ষিত হওয়া যায় না। কাজেই বলা যায় স্বশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত। আর স্বশিক্ষিত হওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের চারপাশের বিভিন্ন পরিবেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তবেই একজন ব্যক্তি সুশিক্ষিত হতে সক্ষম হবে।
তাহলে আজকে এই ছিল আমাদের উপস্থাপনা, মোট ৪টি ভ্যারিয়েন্ট সহ ২টি ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। যাতে তোমরা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করে রাখতে পার। আশা করি তোমাদের ভাল লেগেছে।




